শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বালুদস্যুদের দৌরাত্ম্য

প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বালুদস্যুদের দৌরাত্ম্য চরমে উঠেছে। দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, ইজারা ছাড়াই প্রতিদিন লুট হচ্ছে লাখ টাকার বালু। শুধু বালু নয়, প্রকৃত ইজারাদারদের ড্রেজার ও নৌযানও লুটে নিচ্ছে বালুদস্যুরা। প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন ইজারাদাররা। পুলিশ সরাসরি বালুদস্যুদের সহযোগিতা করছে এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগও করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কাপাশিয়া, কুড়িয়াদি, খেয়াঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যায় বালু ও ট্রলার লুটের ঘটনায় এ মাসের গোড়ার দিকে কাপাশিয়া থানায় একটি মামলা হয়। এর আগে গতবছর নভেম্বরে শ্রীপুর, কাপাশিয়া ও পাগলা থানার সংযোগস্থল ত্রিমোহনী এলাকায় শীতলক্ষ্যার বালু উত্তোলনের সময় চিহ্নিত বালুদস্যুদের হাতে একব্যক্তি খুন হন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী চিহ্নিত বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বলা হয়েছে, বর্তমানে এই মামলার আসামিরা কাপাশিয়া টোক নয়নবাজার সংলগ্ন বানারনলি এলাকায় বীরদর্পে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু লুটে নিচ্ছে। এদেরকে সরাসরি সহযোগিতা করছে নদীর ওপারের পাগলা থানার পুলিশ। এই অংশের ইজারাদার বালু লুটের ঘটনায় পাগলা থানার ওসি ও জনৈক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। পুলিশের ময়মনসিংহ বিভাগের ডিআইজি ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে ২০ লাখ টাকা বেশি দিয়ে তিনি আলোচ্য এলাকার ইজারাদার নিযুক্ত হয়েছেন। অভিযোগে তিনি তার বিরুদ্ধে পরিচালিত নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, পুলিশ ও স্থানীয় মস্তানদের কারণে অদ্যাবধি তিনি ইজারাপ্রাপ্ত এলাকার ধারে কাছেও যেতে পারছেন না।
বালু উত্তোলন নিয়ে শুধু এই একটি ক্ষেত্রেই নয় বরং খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সারাদেশেই একধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- চলছে। আলোচ্যক্ষেত্রে যেমনটি বলা হয়েছে যে, সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনী ছাড়া বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ ব্যবসার সাথে সারাদেশেই এক ধরনের সিন্ডিকেট রয়েছে যাদের মাধ্যমে এ ব্যবসা চলছে। এর সাথে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্যের সম্পর্ক রয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। এটি মূলত ওপেন সিক্রেট। দেখা যাচ্ছে, টেন্ডারের অর্থ জমা দেয়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই একটি মহল নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সে বিবেচনায় বলা যায়, বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। যিনি আইনসঙ্গত ইজারাদার তিনি যদি বালু তুলতে না পারেন তাহলে অন্যরা তুলছে কিভাবে? এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বালু তোলার বিষয়টি হেলাফেলা করার কোন ব্যাপার নয়, এর দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমত, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বালু উত্তোলন জরুরি। কোত্থেকে কতটা বালু তুলতে হবে সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা না নিয়ে বালু তোলা অসঙ্গত। কারণ, এতে নদী তীর তথা নদীর ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকে। ফলে প্রকৃত ইজারাদার বা বৈধ বালু উত্তোলনকারী বালু না তুললে বা তুলতে না পারলে নদীর ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, নদী তীর দখলের প্রসঙ্গ রয়েছে। বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল হয়ে যায়। একবার দখল হয়ে গেলে তা উদ্ধার করা সহজ কাজ নয়। বাস্তবে এসব যাদের দেখার কথা তারাই প্রকারান্তরে দুর্বৃত্তায়নের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এর সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলও জড়িয়ে আছে।
আলোচ্য ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, স্থানীয় থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস ম্যানেজ করে বালু মহালগুলোতে প্রকাশ্যই লুটপাটের মহোৎসব চলছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে লুণ্ঠনকারীদের কারণে সড়কের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা মেরামতেও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সঙ্গত ও বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, যাদের দায়িত্ব সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা তারাই এসব অবৈধ কর্মকা-কে প্রশ্রয় দিচ্ছে। মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে, এর মধ্যে অবৈধ অর্থের ভাগাভাগির কোন ব্যাপার থেকে থাকতে পারে। নদী রক্ষা ও অবৈধ দখল ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই এথেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সঠিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সঠিক নদী ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে যত্রতত্র বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন