শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

প্রতিদিন ধরা পড়ছে ইয়াবা ফেনসিডিল মদ চট্টগ্রামে থামছে না মাদকের জোয়ার

প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : তিন হাজার ৫৬৮ পিস ইয়াবা, এক হাজার ৪৫ বোতল ফেনসিডিল, ১১ কেজি গাঁজা- চব্বিশ ঘণ্টায় বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল (রোববার) থানায় মামলা হয়েছে ১২টি। বৃহস্পতিবার নগরীর তিনটি এলাকায় র‌্যাব পুলিশে পৃথক অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৮২ হাজার পিস ইয়াবা, গ্রেফতার করা হয় ২ নারীসহ ৬ জনকে। বুধবার কদমতলীর দুটি পরিবহন সংস্থার অফিস থেকে ঢাকায় পাচারের আগে ৯০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই দিন একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে জব্দ করা হয় ৬ হাজার বোতল আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেনসিডিল।
প্রতিদিন মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও চোলাইমদ ধরা পড়ছে। সোমবার সীতাকুন্ডের সাগর উপকূলে কোস্টগার্ডের অভিযানে উদ্ধার হয় ৬ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। গত ১৯ জুলাই আনোয়ারা উপকূলে কোস্টগার্ডের অপর এক অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১০ লাখ পিস ইয়াবার বড় একটি চালান।
কোস্টগার্ড, র‌্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাঁড়াশি অভিযানেও থামছে না ইয়াবাসহ মাদকের ভয়াল আগ্রাসন। মাদকের জোয়ারে ভাসছে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই আসছে ইয়াবার চালান। সাগর, পাহাড় আর সড়ক পথে এসব চালান চট্টগ্রাম হয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতে থেকে আসছে ফেনসিডিলসহ হরেক রকমের মাদক। ফেনসিডিলের চালান আসা কিছুটা কমে গেলেও স¤প্রতি নগরীতে প্রতিদিনই ফেনসিডিল ধরা পড়ছে। এতে বুঝা যাচ্ছে ফেনসিডিলের চালান আসা ফের বেড়ে গেছে। যশোরের বেনাপোল সীমান্ত হয়ে আসা একটি ফেনসিডিলের চালান স¤প্রতি নগরীতে ধরা পড়েছে।
তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকে আসছে দেশি মদ ও গাঁজা। এসব মাদক চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে এসব মাদকের ছোট-বড় কিছু চালান ধরা পড়লেও পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক অক্ষত থেকে যাচ্ছে। নেশার নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও। গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলছে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা জঙ্গি প্রতিরোধসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত, আর এই সুযোগে বেপরোয়া মাদক পাচারকারীরা।
মহানগরীর মাদকের হাটেও নিয়মিত অভিযান চলছে। এরপরও থামছে না মাদক ব্যবসা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক পাচার ও ব্যবসার সাথে বিশাল সিন্ডিকেট জড়িত। এই সিন্ডিকেটে আছে সরকারী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও ক্যাডার মস্তান, পেশাদার অপরাধী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও জড়িত তাদের সাথে। আর এই কারণে এই সিন্ডিকেট দুর্বল করা যাচ্ছে না।
মাদকের রাজ্যে এখন রাজা ইয়াবা। নেশার এ নীল ট্যাবলেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রামসহ সারা দেশ। রঙিন এই ট্যাবলেটের জন্ম মিয়ানমারে। বাংলাদেশকে টার্গেট করে সীমান্তে গড়ে উঠা ছোট-বড় অর্ধশত কারখানায় উৎপাদিত পুরো চালান ঠেলে দেয়া হচ্ছে এদেশে। এই সাগর পথে মাছ ধরা ট্রলারে সরাসরি মিয়ানমার থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান দেশে ঢুকে পড়ছে। চালান আসছে সড়ক পথেও।
ভারতীয় ফেনসিডিলের উৎপাতও বেড়ে গেছে। র‌্যাব পুলিশের অভিযানে প্রায় ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়ছে। সীমান্ত হয়ে ফেনসিডিলের চালান আসছে চট্টগ্রামে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকের হাটে এসব ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে। শনিবার নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকা থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান তল্লাশি চালিয়ে ৮৯৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এর আগে ট্রাক থেকেও একটি বড় চালান উদ্ধার হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন