নওগাঁ সদরের দোগাছি গ্রামে অবস্থিত কাদরীয়া ইয়াছিনিয়া দরবার শরিফে চলমান বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবীতে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য লিখিত ভাবে অভিযোগ প্রদান করেছে গ্রামবাসীরা। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পরও প্রশাসন দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দোগাছী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে দোগাছী ডাঙ্গাপাড়া নামক স্থানে অবস্থিত এই খন্ডপীরের খানকা শরীফ।
গ্রামবাসীর পক্ষে ভন্ডপীর মৃত আখতারের ছেলে মিজানুর রহমান তার লিখিত অভিযোগে বলেন তার বাবা আখতার হোসেন চলতি বছরের অক্টোবর মাসে মৃত্যুবরন করেন। বাবা কাদরীয়া ইয়াছিনিয়া দরবার শরিফে একজন ভন্ড পীর ছিলেন। সেখানে বিভিন্ন রকমের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ সম্পন্ন হয়ে আসছিল। বাবা দীর্ঘ প্রায় এক যুগ গোসল করে নাই। তিনি দরবারের ভিতরে প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় একবার করে দক্ষিণ দিক হয়ে ভক্তি প্রদান করতেন এবং ভিতরের টয়লেট পশ্চিম দিক করে নির্মাণ করে ব্যবহার করা হচ্ছে। জন্মগত ভাবে বাবা একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলেন। আমি আখতারের সন্তান হিসেবে এই সব ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের ঘোর বিরোধীতা করতাম। বাবার মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাছরিন আক্তার (রাণী) ও তার সকল ভন্ড ভক্তগন দরবার শরীফে উপস্থিত হয়ে আমার সম্মতি ছাড়াই ইসলামের নিয়ম বর্হিভ’ত ভাবে বাবাকে দাফন করেন। ভক্তরা আমার বাবাকে কবরে নামিয়ে নিয়ম অনুসারে উত্তর দিকে কেবলা না করে দক্ষিণ দিকে কেবলা করেন এবং উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘরের ভিতর কবর খুড়ে দাফন করেন। এছাড়াও আমার বাবার কবরের পাশে তবলা বাজিয়ে বিভিন্ন পুরুষ ও মহিলারা এসে নাচ ও গান করেন এবং একে অপরের সঙ্গে নোংরামী করেন। এছাড়াও বাবা এখনো জীবিত আছে মনে করে কবরের উপরে বিভিন্ন রকমের খাবার রাখা হয়। ইদানিং আমার ছোট ভাই কিবরিয়াও বাবার মতো ভন্ডপীর সাজার চেষ্টা করছে। আমি তাদের এই সব কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করতে গেলেই তারা আমাকে দা, কুরাল নিয়ে মারপিট করাসহ জীবন নাশের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদান করে আসছে। তারা আমার একটি ঘরও ভেঙ্গে দিয়েছে। এই সব ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডগুলো বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের লিখিত ভাবে অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনই পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তারা। তাই দিন দিন ভন্ডদের এই সব ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডগুলো আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে আর নষ্ট হচ্ছে আশেপাশের পরিবেশ।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, শাহজাহান শেখসহ অনেকেই বলেন এই দরবার শরীফে ইসলামের নামে ভুল ধারনা দিয়ে যুব সমাজ ও অন্যান্য পুরুষ-মহিলাদের মুরিদ দেওয়া হয়। আর এখানকার ভক্তরা হচ্ছে মাদক সেবনকারী দিনমজুর, রিক্সা, ভটভটি, ভ্যান চালকসহ অন্যান্য খারাপ শ্রেণির মানুষরা। যারা আখতারের মুরিদ নিয়েছে তারা এখানে এসে রাতে নাচ-গান করে জিকির করে। ভক্তরা নাকি এখানে এসে আল্লাহর ইবাদত করে। দরবার শরীফে যদি ইবাদত হয় তাহলে মসজিদ কি জন্য আছে। আমরা গ্রামবাসীরা এই সব ভন্ডদের হাত থেকে স্থায়ী ভাবে রক্ষা পেতে চাই। বাঁচাতে চাই আগামী প্রজন্মকে, গ্রামকে ও ইসলামকে। তাই আমরা প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মৃত আখতারের বড় ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন (৬৫) বলেন আখতার এক সময় ভালোই ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই পীর হিসেবে নিজেকে জাহির করে ভন্ডামী শুরু করে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা ভালো করতে পারিনি। কিছু মাদক সেবী খারাপ মানুষের সঙ্গে চলাচল শুরু করে। তখন তাকে আমরা আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলে সে অন্যত্র বাড়ি করে খানকা শরীফ নামের এক ভন্ডামীর আড্ডাস্থল তৈরি করে। আখতারের মৃত্যুর পর ইসলামের নিয়ম অনুসারে তাকে দাফন করা হয়নি। বর্তমানে আখতারের স্ত্রী ও ছেলেরা এই সব ইসলাম বিরোধী ভন্ডামী কর্মকান্ডগুলো চলমান রেখেছে। আমি ওই দরবার শরীফের স্থায়ী ভাবে উচ্ছেদসহ এখানে আসা ভন্ড ভক্ত ও আখতারের ভন্ড স্ত্রী এবং ওর ভন্ড সন্তানদের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আফেলাতুন নেছা বলেন প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাতে আখতারের ভন্ড ভক্তরা এই খানকায় আসে আর গাঁজা, মদসহ অন্যান্য মাদক সেবন করে ঢোল বাজিয়ে জিকির করে। তারা কখন কি যে করে তা বলা মুশকিল। আমিসহ স্থানীয়রা এই ভন্ড দরবার শরীফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনকে বহুবার বলেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য এলাকাবাসীসহ পুরো এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। দিন দিন দরবারে আসা ভন্ড ভক্ত ও ভন্ড পীর আখতারের স্ত্রী ও সন্তানদের অত্যাচারে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। তারা কারো কোন কথাই শোনেন না এবং মানেন না। আমরা এই ভন্ডপীরের দরবার শরীফের স্থায়ী ভাবে উচ্ছেদ চাই।
বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাছানুল আল মামুন বলেন আখতার আমাদের গ্রামের মসজিদের মোয়াজ্জিন থাকা অবস্থায় কোরআন শরীফের উপর পা দিয়ে মসজিদের ঘড়ি চুরি করার পর তাকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তার ভন্ডামীর কর্মকান্ডগুলো। আমি একাধিকবার চেষ্টা করেছি আখতারের এই সব কর্মকান্ডগুলো বন্ধ করার কিন্তু পারিনি। তাই ভন্ডদের এই দরবার শরীফ উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসনের শক্তিশালী পদক্ষেপ খুবই জরুরী। তা না হলে এই অঞ্চলের যুব সমাজ থেকে শুরু করে পুরো এলাকা নষ্ট হয়ে যাবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন এই বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই দরবার শরীফ বন্ধ কিংবা উচ্ছেদ কিংবা এই সব ভন্ড কর্মকান্ডগুলো বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন। মূলত এই দরবার শরীফ থেকে আখতারের মরদেহ তুলে অন্যত্র দাফন করালে হয়তো বা তার বক্তদের এই দরবারে আসা কমে যাবে। তাই আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন