বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংবিধানের কথা বলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, এমনকি বিচারকরাও রাজপথে নেমে এসেছেন। তারা রীতিমতো ব্যানার হাতে মিছিল শ্লোগান দিয়ে রাজনীতিবিদদের মতো সভা সমাবেশ করেছেন। বিচারক ও পুলিশ বাহিনী মানববন্ধন করেছে, যা দেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা। এধরণের ঘটনা দেশের জন্য অশনি সংকেত।
তিনি বলেন, রাজপথে সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন ভূমিকা দেখে জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত, আতংকিত ও ক্ষুব্ধ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার, বিচারকদের অন্যকোন চেতনা থাকতে পারে না, তাঁদের একটি মাত্র চেতনাই থাকা দরকার, সেটি হলো ন্যায়বিচার। নাগরিক সমাজে বিবদমান নানা পক্ষের মানুষ বিবাদ মিমাংসার জন্য আদালত ও প্রশাসনেরই শরনাপন্ন হয়। তারাই যদি কোন এক পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নামে তাহলে অন্য পক্ষের কথা কে শুনবে? তাহলে ন্যায়বিচার বলে তো কিছু থাকবে না। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, একদলীয় শাসনে যেমন একদলীয় চেতনাই রাষ্ট্রের সবখানে প্রতিফলিত হয়, সেটিরই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল বিচারক ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের রাজপথে নামার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে চলছে এক ব্যক্তির নিষ্ঠুর জমিদারী শাসন। একটি সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের পবিত্র দায়িত্ব সংবিধান সমুন্নত রাখা। সরকার যদি মনে করে, দেশে কোনো নাগরিক সংবিধান বিরোধী কাজ করছে তাহলে সংবিধান সমুন্নত রাখতে তাদের আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটি না করে তারা কি দাবি নিয়ে রাজপথে নামলেন? জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন? কার কাছে দাবি জানালেন? কাকে হুমকি দিলেন? কাকে প্রতিপক্ষ বানালেন? ক্ষমতা-শক্তি-বন্দুক-আইন-আদালত সব কিছু নিজেদের মতো করে জবর দখলে রেখে সরকার, প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন দল সব এখন মিলেমিশে একাকার। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, এমন ক্ষমতা হিটলার ও মুসোলিনিরও ছিল। কিন্তু ইতিহাসে তারা এখন নিষিদ্ধ নাম।
বিরোধীদলকে রাজপথে নামার সুযোগ দেয়া হয়না অভিযোগ করে তিনি বলেন, যারা এখন ক্ষমতায় রয়েছেন, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিরোধী দল রাজপথে নামার সুযোগ পায়না, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানুষের অধিকার নিয়ে দেশের মানুষ নানা দাবিতে মানববন্ধন করতো অথচ গত কয়েকদিন আগে পুলিশ রাতের আঁধারে শিক্ষক ও শ্রমিকদের লাঠিপেটা ও নির্যাতন করে তাদের উঠিয়ে দিয়েছে, পুলিশ গোটা এলাকা দখলে নিয়েছে। রাজপথে নামতেই দেয়া হচ্ছে না বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও। আর সেই অবস্থায় সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দল, তাদের অঙ্গ সংগঠন, বিচারক, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ সবাই এখন রাজপথে তাদের পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যস্ত।
সরকার ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনাকে কেন আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চান তা দেশের মানুষ খুব ভালো করে জানে।আওয়ামী লীগ এতো দুর্নীতি করেছে, এতো খুন-গুম-হত্যা-অপকর্ম করেছে যে, তারা ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পাচ্ছে। আতংকে প্রহর কাটছে তাদের। ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এ দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে। এই বিচারের ভয়ে কৌশল করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। এছাড়া ক্ষমতা থেকে চলে গেলে দেশটাকে লুটেপুটে নিয়ে কানাডায় বেগমপাড়া, আমেরিকায় সাহেবপল্লী, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, লন্ডন, ইউরোপ, দুবাইতে তাদের অর্থ পাচার বন্ধ হয়ে যাবে। ওরা জানে শেখ হাসিনা যতদিন থাকবে ততদিন অবাধে লুটপাট করা যাবে। তাই যেকোন উপায়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে চায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন