আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, একতরফা ও নিশিরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী সরকার এখন আন্তর্জাতিকভাবেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমান বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে জনগণের যে নবতরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে প্রধানমন্ত্রী আরও বেশী ক্রোধে-ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। জনতার এই উত্তাল ঢেউ দেখে শেখ হাসিনা শঙ্কিত হয়ে মনে করছেন-ঘুষ-দুর্নীতি-পুঁজি লুন্ঠনের যে অভয়ারণ্য তৈরী করেছেন বাংলাদেশে সেটি হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে। সে কারণেই বিরোধী কর্মসূচিতে দলীয় ক্যাডার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে গেস্টাপো বাহিনীর মতো হত্যার লাইসেন্স দিয়ে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ লজ্জা-শরম হারিয়ে এখন স্বঘোষিত দেশ নেতা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে চলছে এক ভয়াল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লক্ষ্য হচ্ছে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তার তাদের জন্য অপরিহার্য। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবন-যাপনকে নির্বিঘ্ন রাখতেই ক্ষমতার আড়ালে মহাদুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। গণতন্ত্রকে কঙ্কালে পরিণত করে দেশ ও জনগণের ভবিষ্যতকে বরবাদ করার জন্যই চিরস্থায়ী ক্ষমতার বলয় তৈরীর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। অবৈধ সরকারের রক্তচক্ষুর দানবীয় তান্ডবে বিরোধী দল, ভিন্ন মত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার সবকিছুকেই ডাকাতি করা হয়েছে। শেখ হাসিনর উন্মাদ লীলায় গ্রামে-গঞ্জে-হাটে-ঘাটে-বন্দরে-বাজারে-শহরে লাশ পড়ছে, ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। ওত পেতে থাকা শিকারী বাঘিনীর মতো বিএনপি’র মিছিলের ওপর নির্দয় হৃদয়হীন পুলিশ গুলি চালিয়ে জীবন কেড়ে নিচ্ছে তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে তারা প্রায় সবাই শ্রমজীবী মানুষ। মাত্র তিন দিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারাম উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়ার শরীরে পুলিশ বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। নয়ন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান, মৎস্য শিকার করেই কোন রকমে সংসার চালাতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে এখন তার পরিবার পথে বসেছে। এভাবেই মুন্সিগঞ্জের শাওন, নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধান দুজনই মটর মেকানিকের পেশায় জড়িত ছিল। এখন তাদের পরিবার হাহাকার করছে, কারণ তাদের উপার্জনের আর কেউ নেই। তাদের পরিবারে যন্ত্রণা ও বেদনার করুণ প্রকাশ দেখা দিয়েছে। নিপীড়ণে নিমজ্জমান মানুষের অনুচ্চারিত যন্ত্রণায় আনন্দিত হন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সর্বনাশা আশকারার কারণেই দেশব্যাপী রক্তের স্রোত বইছে।
রিজভী বলেন, অনাহার, অর্ধাহার, ডেঙ্গ ও রোগ-শোকে ধুকছে দেশের লোক, ঝরছে শিশুর প্রাণ, সারাদেশ উদ্বেগ-উৎকন্ঠিত। মানুষের স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকারকেও এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক নিরন্তর অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। মামলা-হামলা, ধরপাকড় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম কেড়ে নেয়া হয়েছে, তারা কেউ বাড়ীতে অবস্থান করতে পারছেন না। বাসা ও বাড়ীর মহিলা সদস্যরা পর্যন্ত পুলিশী অসদাচরণের শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। রাজবন্দীদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রাখা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ভিন্নমতের প্রতি এই সরকারের আক্রমণাত্মক আচরণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রতিবাদী স্বরকে থামিয়ে দেয়া, বিরুদ্ধ মত পেশের কোন পথ না রাখা। দেশের জনগণ এখন রাগ-ঘৃণা ও প্রতিবাদের আগ্নেয়গিরি হয়ে আছে। বর্তমান শাসগোষ্ঠীর অনাচার চলতে থাকলে যেকোন সময় প্রতিশোধের অগ্ন্যুৎপাতের মহাপ্লাবন বয়ে যাবে।
কর্মসূচি : পুলিশের মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা, পুলিশী নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী ৩০ নভেম্বর বুধবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে (মহানগরগুলোতে) বিএনপি’র উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। তবে রাজশাহী ও কুমিল্লা বিভাগীয় সদর উক্ত কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন