রাজশাহীর বাগমারার সেই জোঁকাবিলের মৎস্যচাষ প্রকল্প নিয়ে আবারো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিলের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামির নেতৃত্বে এই অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকল্পের অনিয়ম ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দায়ে ইতোমধ্যে প্রধান দুই আসামি আশরাফ আলী, আফসার, সাবেক চেয়ারম্যান আহসান হাবিবসহ ১০ জনকে প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রকল্পের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোঁকাবিলের কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান খুন হওয়ার পর বিলের মৎস্যচাষ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত দেড় বছর আগে প্রতিপক্ষরা বিলের নিয়ন্ত্রণ নিতে আনিসুর রহমানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলে। এরপর একাধিকবার উভয় পক্ষ আবারো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে হত্যাসহ একাধিক মামলাও হয়।
এদিকে উভয় পক্ষের মধ্যে স¤প্রীতি সৃষ্টির জন্য জেলা পুলিশ উদ্যোগ গ্রহণ করে ও একাধিক সমঝোতার বৈঠক বসে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজনদের নিয়ে বৈঠকের পর জেলা পরিষদের সদস্য ও নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদকে সভাপতি করে জোঁকাবিল মৎস্যচাষ প্রকল্পের ৪২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সে থেকে বিলটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিলের শেয়ারদারেরাও সুষ্ঠুভাবে তাদের পাওনা বুঝে পেয়ে আসছেন।
এদিকে বিলের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আহসান হাবিব, হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি আফসার আলী ও তার ভাই আশরাফ আলীসহ প্রকল্পের ১০ জন সদস্য বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ছাড়াও পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর প্রকল্পের নিয়মানুসারে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তাদের বাদ দেয়া হয়। এর পর থেকে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। প্রকল্পের অন্যদের হুমকি দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রকল্পের সভাপতিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে পুলিশসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের তদন্তে এর সত্যতা না পাওয়াতে উল্টো বিপাকে পড়ে তারা।
প্রকল্পের সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, সুষ্ঠু ও প্রকল্পের নিয়মানুসারে জোঁকাবিলের মৎস্যচাষ প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। আনিসুর হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ কিছু উচ্ছৃংখল লোকজন আবারো সহিংসতার সৃষ্টির চেষ্টা করছে। প্রকল্পের নিয়মানুসারে প্রত্যেক সদস্যকে নির্দিষ্ট সময়ে পাওনা টাকা বুঝে দেয়া হচ্ছে। টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।
প্রকল্পের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, পাশের এলাকার এক ব্যক্তি যিনি একটি বাহিনীর প্রধান হিসাবে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি আনিসুর হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে নিয়ে বিলটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন। নিজের ভাই আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রকল্পের সদস্য রাহিদ হোসেন বলেন, তার ভাইসহ অন্যরা প্রকল্পের কোনো নিয়মই মানেন না। তারা প্রকল্পের টাকা নয়-ছয় করা ও বিলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। একই ধরণের কথা বলেছেন প্রকল্পের অন্য সদস্যরাও।
তবে আহসান হাবিব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন। প্রকল্পের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়াতে প্রতিপক্ষই উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে আনিসুর হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং জমির মালিকদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন