একটি বাসযোগ্য রাজধানী গড়ে তুলতে ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও দেখা যচ্ছে, এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেদিকে নজর না দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতেই ব্যস্ত। গতকাল একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মচারী গত অর্থবছরে মূলবেতনের দ্বিগুণ ওভারটাইম নিয়েছেন। এব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম খান বলেছেন, তিনি এব্যাপারে কিছু জানেন না। অভিযোগ রয়েছে, অনেক গাড়ীচালক প্রকৃত শ্রমের অতিরিক্ত ওভারটাইম দাবি করেন। পাম্প অপারেটররা কোন কোন ক্ষেত্রে মূল কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টার চেয়ে ওভারটাইম দ্বিগুণ দেখান। ওয়াসার প্রশাসন বিভাগের দায়িত্বশীলদের সাথে কথাবলে রিপোর্টে বলা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন, ওয়াসার গভীর নলকূপের পাম্প স্টেশনগুলোতে লোকবল কম। প্রতিমাসেই পাম্পের সংখ্যা বাড়ে কিন্তু সে হারে লোক বাড়ে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি জানিয়েছেন, ওভারটাইম বিল বেশি হওয়ায় মূল কাজ ও অতিরিক্ত কাজের হিসাব চেয়েছিলাম। তার জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, ওয়াসার লোকজন যে পাম্পগুলো চালান সেগুলো চালানোর জন্য বিদ্যুৎ নেই বলে ডিজেলে চালানো হয়। বিদ্যুৎ বিভাগে খোঁজ নিলেই সঠিক ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
রাজধানী ঢাকা যে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা। রাজধানীতে যেকোন সময়ে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে একাকার হয়ে যায়। দিন দিন অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, গোটা রজধানীতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু তলিয়ে যায় সেটাই এখন প্রধান সমস্যা নয় বরং একবার তলিয়ে গেলে তা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি পেতে অন্তত দু’ থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। যদি এর মধ্যে আবার বৃষ্টি হয় তাহলে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে দাঁড়ায়। কেন এই পরিস্থিতি তা নিয়ে অসংখ্যবার লেখালেখি হয়েছে। বাস্তবে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়েছে বা হবার মতো কোন লক্ষণ রয়েছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খালগুলো ছিল এখন বেশিরভাগের অস্তিত্ব নেই। এসব খাল কারা কিভাবে দখল করে রেখেছে তা নিয়েও লেখালেখি হয়েছে। দেখা যায়, যখন বৃষ্টি হয় বা শহর তলিয়ে যায়, তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব খাল উদ্ধার নিয়ে তৎপর হয়ে উঠে। বাস্তবে পরিস্থিতি যে তিমিরে ছিল সেখানেই থেকে যায়। দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর ড্রেন পরিষ্কার না করাতে ময়লা-আবর্জনা জমে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে থাকে। মূলত ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে গোটা রাজধানীই ওয়াটারলগিং-এর শিকার। বৃষ্টি হলে রাজধানী ডুবে যায়, এতে নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। যে নগরবাসী ওয়াসার বিল দিচ্ছেন, কর দিচ্ছেন তাদের এই দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই। অথচ প্রতিদিনই উন্নয়নের নামে রাজধানীর কোথাও না কোথাও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এসব প্রক্রিয়া কার্যত রজধানীবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের জন্য না ওয়াসার কোন কোন কর্মচারী-কর্মকর্তার ভাগ্য ফেরাবার জন্য সে প্রশ্ন এখন জোরালো হয়ে উঠেছে। প্রায়ই রিপোর্ট বেরুচ্ছে, ওয়াসার পানি দুর্গন্ধযুক্ত, পানের অযোগ্য। আবার ওয়াসার পাইপ ফেটে রাস্তা সয়লাবের খবর এবং ওয়াসার লাইনের সাথে সুয়্যারেজের লাইন যুক্ত হয়ে যাবার খবরও প্রকাশিত হচ্ছে। নগরবাসী যখন পানি প্রাপ্তি ও পানিবদ্ধতার দুর্ভোগে তখন ওয়াসার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর অতিরিক্ত কাজের নামে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ নেয়ার কথা উঠেছে তা বড় ধরনের দুর্নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
ওয়াসার গভীর নলকূপের কারণে রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। রাজধানীর পানি সমস্যা পূরণে অনেক আগে থেকেই পানির ভূগর্ভস্থ সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এব্যাপারে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। অথচ রাজধানীর যেসব পাম্প এলাকায় পানি তোলার কারণে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে সেসব এলাকায় পানির স্তর ঠিক রাখতে বা বাড়াতে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা বা নেয়া সম্ভব কিনা এ নিয়ে ওয়াসার কোন মাথাব্যথা নেই। পানির সরবরাহ এবং ব্যবহৃত পানির নিষ্কাশন এদুটোই মূলত ওয়াসার প্রধান কাজ। দেখা যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে সে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। অন্যদিকে জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিচ্ছে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন