রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে ডব্লিউইএফ’র প্রতিবেদন : বড় বাধা অদক্ষ সরকারি প্রশাসন

৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে এবং ৬৬ শতাংশ সীমিত অর্থায়নের সুযোগকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:০৮ পিএম

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বর্তমানে দুর্নীতির চেয়েও বড় প্রতিবন্ধকতা অদক্ষ সরকারি প্রশাসন। ৭২ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রশাসনের অদক্ষতাকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে এবং ৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী সীমিত অর্থায়নের সুযোগকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন। এমন চিত্র উঠে এসেছে বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) পক্ষে এই তথ্য জানিয়েছে প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ অংশের হয়ে কাজ করা গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সমীক্ষা সিপিডির নিজস্ব প্রতিবেদন। যদিও এবার করোনার কারণে অন্যান্য বছরের মতো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকের র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়নি। তবে কোন দেশের কি সমস্যা তা জানতে ওই দেশের ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপ করা হয়েছে। ডব্লিউইএফের পক্ষে বাংলাদেশে এই কাজটি করেছে সিপিডি। তারা ১০ কোটি টাকার ওপর সম্পদ আছে এমন ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের মতামত নিয়েছে। গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদন দুটি প্রকাশ করেছে সিপিডি। এতে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রতিযোগিতাসক্ষম করতে ১২টি বিষয়ের প্রতি জোর দেয়ার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-সুশাসন, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ, অর্থায়নের পরিবেশ, বৈদেশিক বাণিজ্য, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, ব্যবসায় পরিচালনা, নিরাপত্তা, ঝুঁকি ইত্যাদি। এবারের প্রতিবেদন তৈরি করতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের ১৪২টি দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ১২৬টি দেশের ব্যবসায়ীদের দেয়া মতামত যৌক্তিক বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবদেন তৈরিতে বাংলাদেশের হয়ে ৫৫ জন ব্যবসায়ী তাদের মতামত দিয়েছেন। যাদের ব্যবসায়িক সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি। গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ এর প্রতিবেদন তৈরিতে মতামত দিয়েছিলনে ৭৭ জন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ৭৫ দশমিক ১ শতাংশ সন্তুষ্ট হলেও ৭২ শতাংশের মতামত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সরকারের অদক্ষ প্রশাসন। আর ৬৮ শতাংশের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অবস্থান নেমে এসেছে দুইয়ে। আর্থিক খাতের অপর্যাপ্ত সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন ৬৬ শতাংশ। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ বাড়ছে কিন্তু উদ্যোগগুলো বড় হচ্ছে না। আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সম্প্রসারণে যতটা মনোযোগী ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য ততটা নয়।

এই জরিপকাল করোনার শুরুর সময়, তাই এখানে করোনাকালীন সমস্যাগুলো সেভাবে উঠে আসেনি। তবে এই সংকট মোকাবিলায় দেশগুলো কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে তা উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেয়া ১৪২টি দেশের ১১ হাজার ৮৬৬ জন ব্যবসায়ী তাদের মতামত দিয়েছেন।

এবারের প্রতিবেদন তৈরিতে করোনাকে আমলে নিয়ে যেমন প্রশ্ন তৈরি করা সম্ভব হয়নি তেমনি ব্যবসায়ীরাও আগের বছরের অভিজ্ঞতার আলোকেই তাদের মতামত জানিয়েছেন। প্রতিবেদন তৈরিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা তাদের বিশ্লেষণ ও মতামত দিয়েছেন।

ডব্লিউইএফ বলছে, গেল ১২ বছরের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে ব্যবহারকারী ও বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ছে। তবে এই করোনাকালে আরেকটি বিষয় প্রকট হয়েছে তা হলো প্রযুক্তির সুবিধা না পাওয়া মানুষের সংখ্যাও বেশ বড়। তাই এখাতে আগামীর বিনিয়োগ পরিকল্পনা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার বিস্তার হয়েছে সন্তুষ্টজনক কিন্তু মানের দিক দিয়ে তা অর্থনীতিতে তেমন ভূমিকা রাখার মতো কার্যকরী নয়। সংস্থাটি বলছে, উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করা ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর দক্ষতার অভাবের কারণে তাদের কর্মক্ষেত্রে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কর্মরত ৬৪ শতাংশেরই ডিজিটাল দক্ষতার অভাব রয়েছে। গতবারের চেয়ে এক্ষেত্রে স্কোর কমেছে দশমিক ছয় তিন শতাংশ। অর্থাৎ কর্মরতদের ডিজিটাল দক্ষতা না বেড়ে বরং এক বছরে খানিকটা কমেছে। তবে, উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ কর্মপোযোগী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করতে চায়।

দেশের কর্মক্ষেত্রে বিদেশি দক্ষ লোকবলের প্রবেশ বেড়েছে এক বছর আগের তুলনায় দশমিক এক পাঁচ শতাংশ। গত বছর এখানে স্কোর ছিল ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এই প্রবণতা স্থানীয়দের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ, এতে স্থানীয়দের কাজের সুযোগ পাওয়ার পথ আরও সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

২০১৯ সালে আগে বছরের তুলনায় আর্থিক খাতের অবনমন হয়েছে। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় পুঁজিবাজারে বাজে অবস্থার দিকে গেছে। পদ্মা সেতু নতুন দিনে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেও উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এবারের প্রতিবেদনে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে একেক সময় একেকটি সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় দুর্নীতি ছিল বড় সমস্যা। পরে অবকাঠামো বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এখন আবার ব্যবসায়ীরা অদক্ষ প্রশাসনকে বড় সমস্যা মনে করছেন। বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রতিযোগিতাসক্ষম করতে ১২টি বিষয়ের প্রতি জোর দেয়ার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-সুশাসন, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ, অর্থায়নের পরিবেশ, বৈদেশিক বাণিজ্য, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, ব্যবসায় পরিচালনা, নিরাপত্তা, ঝুঁকি ইত্যাদি

প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সুদৃঢ় করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে গিয়ে যেন কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি না হয়। তিনি বলেন, দক্ষ সরকারি প্রশাসন তৈরি করতে হলে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সুদৃঢ় করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে গিয়ে যেন কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি না হয়। তিনি বলেন, দক্ষ সরকারি প্রশাসন তৈরি করতে হলে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দক্ষ ও উন্নয়নমুখী অর্থনীতির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিবেশ সহজ করতে হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ বাড়াতে হবে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা ধরনের রূপান্তর পয়োজন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন