আর্থিক অসঙ্গতি বা অন্য কোনো কারণে কেউ যদি খাদ্য সংগ্রহে অসমর্থ হয়, তবে তাকে সহযোগিতা করা সামার্থ্যবানদের কর্তব্য। রাসূলূল্লাহ স. এ প্রসঙ্গে বলেছেন: জনৈক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ স.কে জিজ্ঞাসা করল? ইসলামের মধ্যে সর্বোত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অপরকে খাওয়ানো এবং পরিচিতি ও অপরিচিতকে সালাম জানানো।
সুস্বাস্থ্য: টেকসই উন্নয়নে জাতিসংঘ সব বয়সী মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনমান নিশ্চিত করতে গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামও মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার তাগিদে দিয়েছে। রাসূলূল্লাহ স. মদিনা রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের প্রতি যথাযোগ্য গুরুত্বরোপ করে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রবর্তন করেন। এ সময়ের চিকিৎসক ছিলেন হারিস ইবনে কালাদাহ আসসাকাফী ও আবু আবী রামসাহ আততামীমী প্রমুখ। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্পর্কে রাসূলূল্লাহ স. মুসলমানদেরকে যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন আজকের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা তা পড়ে অবাহ না হয়ে পারে না। মদীনা রাষ্ট্রে গণস্বাস্থ্য ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। রোগীদের দেখাশোনা, সেবা শুশ্রুষা এবং মৃদ ব্যক্তির দাফন কাফনে অংশগ্রহণ ও এসব কাজ সম্পদন করাকে রাসূলূল্লাহ স. ঈমানী দায়িত্বে পরিণত করেছেন। দেহ সুস্থ এবং আত্মার কল্যাণের জন্য হালাল ও পবিত্র তথা স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হালাল খাদ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন: হে মানব ম-লী পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু সমাগ্রী ভক্ষণ কর।
শিক্ষা: শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মানব সম্পদে পরিণত হয়। একটি দক্ষ ও উন্নত মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা একটি অপরিহার্য শর্ত। ইসলাম বিদ্যাশিক্ষাকে প্রত্যেক নরনারীর উপর ফরয করে দিয়েছে। শিক্ষিত ব্যক্তির মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত বা প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত্ব দান করা হয়। আর বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই কেবল শিক্ষা গ্রহন করে।
সুপেয় পানি: পানির অপর নাম জীবন। সব প্রাণীর জীবনই পানি থেকে তৈরি। “আল্লাহ বলেন এবং প্রাণযুক্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। মহান আল্লাহ সকলের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন: তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছ? তোমরা কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষন করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি, তবু ও কেন তোমরাদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? ইসলামে পানি অধিকার হলো তার পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা সংরক্ষন করা এবং অপব্যবহার ও অপচয়ের হাত থেকে তাকে রক্ষা করা।
জীবনের নিরাপত্তা: ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন সকল অন্যায় হত্যাকা হারাম করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছেন। তিনি বলেন: যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তোমরা তাকে হত্যা করো না। তবে আইন সম্মত হত্যার কথা স্বতন্ত্র।
সম্মানের নিরাপত্তা: ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা মানুষের মান সম্মান, সম্ভমের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিধান করে। বরং সম্মানের নিরাপত্তাকে তার মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করে। এ কারণে অপরের সম্মানহানি হতে পারে এমন সব কথা ও কাজ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে পরচর্চা, মিথ্যা অপবাদ আরোপ, মন্দ নামে ডাকা, দূর্নাম, দোষারোপ করা। ঘরে ব্যক্তির সাবলীল ও শান্তিপূর্ণ বসবাস নিশ্চিত করার জন্যে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল কুরআন এসব বিষয়ে আলোকপাত করে আল্লাহ বলেন: হে মুমিনগণ! কোন পুুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর কোন নারীকে ও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারীনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না। ঈমানের পর মন্দ নাম অতি জঘন্য। যারা তওবা না করে তারাই জালিম। হে মুুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে বিরত থাক; কারণ অনুমান কোন কোনা ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চায়? বস্তুত তোমরা তো ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।
ধর্ম পালনের স্বাধীনতা: ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তির তার নিজে ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে এবং এটি তার মৌলিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। সত্যপথ মিথ্যা থেকে সুষ্পষ্ট ভাবে পৃথক হয়ে গিয়েছে। মানুষ ও পরিবেশ একে অপরের পরিপূরক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন