রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পাট গবেষণা উপকেন্দ্র চলছে অনেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে। পাট গবেষণা উপকেন্দ্রটির পরীক্ষাগার বন্ধ প্রায় ১০ বছর ধরে। সন্ধ্যা হলেই উপকেন্দ্রটিতে বসে মাদক সেবীদের রমরমা আসর। মাদক সেবীদের অত্যাচারে অতিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এছাড়া সরকারি কোয়াটার সংস্কারের অভাবে কর্মকর্তাদের অন্যত্র থাকতে হচ্ছে। এতে করে তাদের যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া লোকবল সঙ্কটের কারণে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলার তারাবো পৌরসভার যাত্রামুড়া এলাকার পাট গবেষণা উপকেন্দ্রে সরেজমিনে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় ও পাট গবেষণা কেন্দ্রের গোপন সূত্রে জানা গেছে, পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার ১৯৫৬ সালে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার পাট চাষিদের জন্য রূপগঞ্জ উপজেলার যাত্রামুড়া এলাকায় ১৩.৪৫ একর জমিতে পাট গবেষণা উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এখানে পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের কর্মকর্তারা পাটের বীজের ফলন ভালো করতে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে পরে পরীক্ষাগারে বীজের মান পরীক্ষা করা হতো। দেশে ধীরে ধীরে পাট চাষ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের কার্যক্রমও। তবে নরসিংদীর জেলার পলাশসহ কয়েকটি এলাকা ও আড়াইহাজার রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব, পূবেরগাঁও, চারিতালুক, নগরপাড়াসহ বেশকিছু এলাকায় এখনো পাটের চাষ করা হয়। গত ১০ বছর আগে যন্ত্রাংশ ও পরীক্ষার উপাদানের অভাবে পাটের বীজের মান নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষাগারটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পরীক্ষাগারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ কক্ষটি অফিসের কর্মকর্তাদের খাওয়া দাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকার পরীক্ষাগারে পাটের বীজের মান নিয়ন্ত্রণ করতে পাঠাতে হচ্ছে। তবে মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বীজ ঢাকার পরীক্ষাগারে নিয়ে যেতে হলেও এখানে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চলছে বেশ ভালোভাবেই।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে নরসিংদী ও প্রায় শতাধিক পাট চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও এতে নাম ছিল না রূপগঞ্জ উপজেলার কোন পাট চাষির। প্রায় ৯০ ভাগ পাট চাষিই রূপগঞ্জ উপজেলার পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের বিষয়ে জানেন না বলে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে। রূপগঞ্জ উপজেলার পাট চাষিরা বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছে সেবা ও প্রশিক্ষণ থেকে। এ সকল কারণে গবেষণা উপকেন্দ্রটি কোন কাজেই আসছে না রূপগঞ্জের পাট চাষিদের।
গবেষণা উপকেন্দ্রটির কর্মকর্তা কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, পাট গবেষণা উপকেন্দ্রটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। গবেষণা উপকেন্দ্রটির আশপাশে নির্জন বেশি সংখ্যক ঘরবাড়ি নেই। এছাড়া আশপাশে কোন লাইটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এখানে এক প্রকার ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করে। তারাবো পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার লাইট লাগানো কথা বললেও তাতে কোন কাজ হয়নি। এছাড়া সন্ধ্যার পর মাদক সেবীরা দেয়াল টপকে গবেষণা কেন্দ্রের ভেতরে মাদক সেবন করে। এতে কর্মকর্তারা কিছু বললেই স্থানীয় মাদক সেবীরা তাদের হুমকি ধামকি প্রদান করেন।
গবেষণা উপকেন্দ্রটিতে সরকারিভাবে কোয়াটারের ব্যবস্থা থাকলেও কোয়াটারগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। দেয়ালে পলেস্তরা উঠে গিয়ে ও ভবনের বেশিরভাগ অংশে ফাটল ধরে কোয়াটারগুলো থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে কোন কর্মকর্তা সরকারি কোয়াটারে থাকেন না। ফলে কর্মকর্তাদের বাড়ি থেকে গিয়ে অফিস করতে হয় যা অনেকটা কষ্টসাধ্য। এছাড়া গবেষণা উপকেন্দ্রটিতে লোকবল সঙ্কটের কারণে মাঠ পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গবেষণা উপকেন্দ্রটিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ২টি পদই শূন্য, জুনিয়র ফিল্ড সহকারী ৩ জন থাকার কথা থাকলেও ২ জন রয়েছে, মাঠ পরিদর্শকের একটি পদ থাকলেও সেটিও শূন্য রয়েছে। গবেষণা উপকেন্দ্রটিতে একজন মাত্র পাহারাদার রয়েছে।
গবেষণা উপকেন্দ্রটির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসএসও) এসএম শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, এখানকার পাট গবেষণা উপকেন্দ্রটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এখানে মাঠ পর্যায়ে পাটের গবেষণা চলছে। তবে বীজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকায় পরীক্ষাগারে পাঠাতে হয়। সরকারি কোয়াটার সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যার পর মাদক সেবীদের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ ব্যাপাারে আমি রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছি। পাটের উন্নত জাত বের করতে ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের পাট চাষ সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা দিতে আমরা চেষ্টা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন