শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রয়োজন সতর্কতা-সাবধানতা

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত টিকা না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানাই ভালো প্রস্তুতি

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বেড়ে নতুন রোগীর সংখ্যা বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়ছে। এ সময় সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে সচেতন মহলে আশঙ্কা সৃষ্টি হলেও বেশির ভাগ মানুষ কম গুরুত্ব দিচ্ছেন। অনেকেই বেড়াতে গিয়েছেন। এ কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে বিশ্বব্যাপি। ইউরোপের অনেক দেশ আবারও লকডাউন দিয়েছে। যদিও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আমাদের দেশেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনীতি ও শিক্ষা সবকিছুর ওপরই প্রভাব বিস্তার করেছে। ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। অথচ এর মধ্যেও শহর ও গ্রামে মানুষ নির্ভয়ে চলাফেরা করছে, অনেকেই অপ্রয়োজনে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্কুল না খুললেও শিশুদের নিয়ে মা-বাবারা বাইরে যাচ্ছেন।

অবশ্য সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য সরকার ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’, অর্থাৎ মাস্ক না পরলে সেবা নেই এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সরকার করোনাবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের আয়োজন করতে সারা দেশের সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা জোরদার করার কাজও শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সময় জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপি হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। তাই বাংলাদেশকে ঝুঁকি থেকে বাঁচতে সবাইকে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যে কোন জনসমাবেশ সংক্রমণ বাড়াবে, তাই আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জন সমাবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে রুপ পরিবর্তন করেছে করোনা। যা আগের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি শক্তিশালী। তাই সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা দেশের জন্য, দেশের মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য অন্যতম পন্থা। একই সঙ্গে টিকা না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলাই সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি বলে উল্লেখ করেন তারা।

তাদের মতে, শীতের কারণে মানুষের সর্দি-কাশি, অ্যাজমা (হাঁপানি) বাড়ে, ব্রংকাইটিস বাড়ে। সিজন চেঞ্জের জন্য কিছু ভাইরাল জ্বর হয়। টনসিল ফুলে যাওয়া, সাইনোসাইটিসের কারণে নানা রোগ দেখা দেয়। করোনার কারণে এই রোগীরা আক্রান্ত হলে তাদের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে। তাই সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিশ্ব আতঙ্কিত। বাংলাদেশেও যে কোন সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে। এই মুহূর্তে যে কোন জনসমাবেশ সংক্রমণ বাড়াবে বা দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদেরকেও বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। সর্বোপির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনার পরিবর্তিত ভাইরাস অনেক শক্তিশালী হয়ে সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামবে তা বলা যাচ্ছে না। যেহেতু টিকা এখনো আসেনি, তাই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মানুষ যেভাবে বাঁচতে ভালোবাসে, করোনার তা পছন্দ। সাধারণ মানুষ যত একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করবেন, বেড়াতে যাবেন, আরো বেশি লোকের সঙ্গে মিশবেন, করোনারও ছড়াতে তত সুবিধা হবে। এ বছরটা তাই সবাইকে স্বাভাবিক জীবনযাপন পরিত্যাগ করতেই হবে। টিকা না দেয়া এবং করোনার প্রকোপ না কমে যাওয়া পর্যন্ত নিয়ম মেনে চলতেই হবে। কারণ করোনা যায়নি এবং কখন যাবে একথা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে মানুষ যেন রিলাক্স হয়ে গেছে। কেউ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। এ কারণে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপি যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে মানুষ সচেতন না হলে দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, শীতে আমাদের ঘোরাঘুরি, উৎসব, অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। কিন্তু এবার শীতে যেকোনো রকম জনসমাগম, উৎসব, অনুষ্ঠান, ভিড় এড়িয়ে চলুন। উৎসব অনুষ্ঠান করতেই হলে সীমিত পরিসরে অল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করুন।

প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, শীতে করোনা বাড়ে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবে যেহেতু শীতকালে বদ্ধ ঘরে থাকা হয়। অফিস-আদালতে বদ্ধ ঘরে অনেক মানুষ থাকে। তাই এ সময় করোনা দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। মাস্ক পরলে শতকরা ৮০ ভাগ করোনা থেকে নিরাপদে থাকা যায়। এ জন্যই ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন