বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শুরু হল মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর, উন্মোচিত হলো উন্নয়নের নবদ্বার

পদ্মা সেতুর পর এটি শেখ হাসিনা সরকারের আরো একটি বড় সাফল্য

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:১৩ পিএম

পদ্মা সেতুর পর এবার বাস্তবে রূপ নিল শেখ হাসিনা সরকারের আরো একটি স্বপ্ন। দীর্ঘ অপেক্ষা এবং জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে যাত্রা করেছে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর। এই সমুদ্র বন্দরের জেটিতে গতকাল প্রথম ভিড়েছে বিদেশি জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। পানামার পতাকাবাহী ১২০ মিটার লম্বা ও নয় হাজার ৬৮০ টন ওজন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে সমুদ্র বন্দরের প্রথম অস্থায়ী জেটিতে পৌঁছে। এই জাহাজের মাধ্যমেই মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হলো। এনিয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার আরেকটি বৃহৎ দ্বার উন্মোচিত হলো।

মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কৃত্রিম চ্যানেল খনন করে জাহাজ ভেড়ানোর কাজ শুরু হয়েছিল আরো আগে। পরে সেটিকে সমুদ্র বন্দরের রূপ দিতে কাজ শুরু করে সরকার। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। মাতারবাড়িতে নির্মাণাধিন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ করছেন ১৭ টি দেশের ৭ শতাধিক বিদেশী শ্রমিক। এছাড়াও রয়েছেন ৩ হাজার ৮০০ জন দেশের বিভিন্ন এলাকার শ্রমিক। প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে জেটির একটি অংশ নির্মিত হয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, জাহাজ ভেড়ার প্রাথমিক উপযোগী হওয়ায় গেল ২২ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার ‘পেলাভুবন সিলেগন’ বন্দর থেকে মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ নিয়ে মাতারবাড়ি নির্মাণাধিন গভীর সমুদ্র বন্দরের দিকে রওনা দেয়। ঘন্টায় ১১ নটিকেল মাইল গতিতে চলা এ জাহাজটি ৭ দিন পর এ বন্দরে ভিড়েছে। এই জাহাজটির ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) সাড়ে পাঁচ মিটারের বেশী। বন্দরের গভীরতা সাড়ে আট মিটার। যার ফলে জাহাজটি সহসায় এ বন্দর জেটিতে ভিড়তে পেরেছে।

জানা গেছে, বিএনপি জোট সরকারের নেয়া সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাতিল হলে এই অঞ্চলের মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কক্সবাজার অঞ্চলে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ বর্তমান সরকার। এর অংশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া, মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা পয়েন্টে নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ মার্চ এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই নভেম্বরে কাজ শুরু করা হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনায় প্রথম ধাপে রয়েছে দুটি টার্মিনাল। সাধারণ পণ্যবাহী ও কনটেইনার টার্মিনালে বড় জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) ভিড়তে পারবে, যেটি এখন বাংলাদেশের কোনো বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে কন্টেইনার টার্মিনালটি ১৮ হেক্টর জমিতে নির্মিত হবে এবং ৪৬০ মিটার দীর্ঘ বার্থ রয়েছে। এটি ৮,০০০ টিইইউ জাহাজ ধারণ করতে সক্ষম হবে এবং এর বার্ষিক ক্ষমতা ৬,০০,০০০ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউ হবে। পরে, কনটেইনার টার্মিনাল প্রসারিত করা হবে, ৭০ হেক্টর জমিতে, এই পর্যায়ে একটি ১,৮৫০-মিটার বার্থ থাকবে, এবং এর বার্ষিক ক্ষমতা হবে ২.৮ মিলিয়ন টন।

প্রথম ধাপে বন্দর ও পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক নির্মাণসহ খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। প্রথম ধাপের চলমান কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৬ সাল। দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত হবে তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে টার্মিনাল।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, কাজ শুরু হয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণকাজ। যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত জনবল নিযুক্ত করে এই বন্দরের কাজ চালানো হচ্ছে। মোটামুটি উপযোগী হওয়ায় প্রথম জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের কাজ নির্ধারিত সময়ের সম্পন্ন করা হবে।
এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এটিও হবে পদ্মা সেতুর মত আরো একটি বড় সাফল্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
farukh ahmed ১ জানুয়ারি, ২০২১, ৬:৫২ পিএম says : 0
দেশের প্রত্যক্ষ উন্নতির জন্য সমুদ্র বন্দরের আধূনিকায়ন অত্যন্ত ভালো ও দূরদর্শী সিদ্বান্ত।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন