শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চট্টগ্রামে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ৩০ আটক ১১০

প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : নগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকায় গতকাল (বুধবার) পুলিশের সাথে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংঘর্ষে ১৪ পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ সেখান থেকে নারী শ্রমিকসহ ১১০ জনকে আটক করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে সমগ্র এলাকা দৃশ্যত রণক্ষেত্রের রূপ নেয়। শ্রমিকদের বেপরোয়া ভাঙচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের বিপরীতে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। বেলা ১১টা থেকে টানা এক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলাকালে নিউমার্কেট, স্টেশন রোডসহ নগরীর বিশাল এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জানা যায়, এশিয়ান অ্যাপারেলসের আগ্রাবাদ শাখার এক নারী কর্মী লাঞ্ছনার শিকার হন। এর প্রতিবাদে কয়েকশ’ শ্রমিক স্টেশন রোডে এশিয়ান অ্যাপারেলের অফিসে এসে এর প্রতিবাদ জানায়। তবে সেখানে কাউকে না পেয়ে তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ব্যস্ততম সড়কে অবরোধ দেয়ায় পুরো এলাকায় অচলাবস্থা নেমে আসে। এ সময় শ্রমিকদের হটিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মুসতায়িম হোসেন জানান, এশিয়ার অ্যাপারেল গার্মেন্টসের কয়েকশ’ শ্রমিক স্টেশন রোডের একটি অফিসে তাদের মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করতে আসে, কিন্তু মালিক পক্ষের কাউকে না পেয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পুলিশ গিয়ে ব্যারিকেড তুলে নিতে বললে শ্রমিকরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, পুলিশও তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ ও বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।
পুলিশ ও শ্রমিক সূত্র জানায়, তিন মাস আগে এশিয়ান অ্যাপারেলস পোশাক কারখানাটির স্টেশন রোড শাখার কার্যক্রম কাট্টলিতে স্থানান্তর করা হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ ওই এলাকার বেশ কিছু বহিরাগত যুবক নারী শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে। এই কারণে তারা স্টেশন রোড শাখায় কারখানার কার্যক্রম পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে আসছিল। পাশাপাশি বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিও ছিল। এসব দাবির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবারও স্টেশন রোড এলাকায় ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নেয় শ্রমিকরা। গতকাল মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে আসার অনুরোধ জানিয়ে ওইদিন পুলিশ তাদের সেখান থেকে তুলে দেয়।
কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শ্রমিকরা সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে শ্রমিকরা। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে পার্কিং করে রাখা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ মাইকিং করে শ্রমিকদের কারখানার ভেতর থেকে বের হতে নিষেধ করে।
পরে পুলিশ শ্রমিকদের বের করে এনে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। এসময় শ্রমিকরা কান্নাকাটি করতে থাকে। শ্রমিকরা অভিযোগ করেছে, পুলিশ অন্যায়ভাবে তাদের উপর হামলা করেছে। তারা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মঙ্গলবারও স্টেশন রোডের অফিসে আসে। কিন্তু মালিকপক্ষে কাউকে তারা পায়নি। পুলিশ তখন তাদের গতকাল সেখানে আসতে বলে। পুলিশের কথামতো তারা মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করার জন্য সেখানে হাজির হলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের উপর লাঠিচার্জ করে।
পুলিশ দাবি করেছে, সংঘর্ষে নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার আবদুর রহিম, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনসহ ১২জন পুলিশ সদস্য আহত হন। অন্যদিকে ৮-১০ জন শ্রমিক আহত হন। এদের মধ্যে কয়েকজনের মাথা ও কপালে গুরুতর জখম দেখা গেছে। ঘটনাস্থল দিয়ে যাওয়ার সময় শরীরে গুলির ছররা বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অ্যাডভোকেট টি আর খান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন