সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইসির ইমেজ তলানিতে

বছরজুড়ে বিতর্ক-সমালোচনা প্রেসিডেন্টের কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি বিশিষ্টজনদের

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

প্রশিক্ষণ ব্যয়ে আর্থিক অনিয়ম, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার, সংবিধানের ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ইসিকে অপসারণের দাবিতে ৪২ নাগরিকের প্রেসিডেন্টকে চিঠি, ২০২০ সালে নির্বাচনগুলোতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার অনুপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বড় আলোচিত ঘটনা। এছাড়া ১১টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও ২৩টি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানতে ব্যর্থ হয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া বিরোধী দলের অভিযোগ আসলে না নেয়া এবং অবাধ ও সুষ্ঠ নিরপক্ষ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে না দিয়েই পার হয়েছে ২০২০ সাল। এদিকে সরকারি দলের নেতারা নিরপক্ষ নির্বাচন করার দাবি তুলেছে। সেটাও করছে না ইসি সব মিলে বছর জুড়ে বিতর্কে ছিলো বলে জানা গেছে।

১৩টি নির্বাচনের মধ্যে আটটি ইভিএমে এবং বাকি পাঁচটি ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্বাচনে চোখে পড়ার মতো ভোটার অনুপস্থিত থাকলেও গণনা শেষে ব্যালটের নির্বাচনে লাখ লাখ ভোটারে উপস্থিতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। গত বছরে আলোচিত ১৩টি নির্বাচনের মধ্যে পাঁচটি ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গড় ভোটার উপস্থিতি ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বিপরীতে ইভিএমে মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আটটি নির্বাচনে ভোটের উপস্থিতি ছিল মাত্র ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। বছরের শেষ সময় এবং প্রথম ধাপের পৌরসভায়। গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। সে ভোটে ২৩টি পৌরসভায় ফলাফলে মধ্যে ১৮টিতে আওয়ামী লীগ, ৩টিতে স্বতন্ত্র এবং ২টিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কম ভোট এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে বেশি ভোটার নিয়েও সমালোচনা মুখে পড়ে ইসি। এছাড়াও ইভিএমের নির্বাচনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। বরং কোনো কোনো ইভিএম নির্বাচনের ফল প্রকাশ করতে ব্যালটের নির্বাচনের চেয়েও বেশি সময় লেগেছে। এতে করে নানাধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে কমিশন। অন্যদিকে মহামারি করোনার সময়ে অনুষ্ঠিত পাঁচ/ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি সেভাবে চোখে না পড়লেও দিন শেষে বিজয়ী প্রার্থী লাখ লাখ ভোট পাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি।

বছরজুড়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ, বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর ভোটের অস্বাভাবিক ব্যবধান এবং বিরোধীদলের কোনো অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় ইসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আর সর্বশেষ বছরের শেষ সময়ে এসে কেএম নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে। এইসব অভিযোগে ইসির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেয় দেশের বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক। প্রেসিডেন্টকে দেওয়া নাগরিক সমাজের এই চিঠি নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে বিতর্কিত করে তোলে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা‘র নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণকারী, বর্তমান নির্বাচন কমিশন, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের রক্ত এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং সংবিধানের ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ইসিকে অপসারণের দাবি জানিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর দেশের বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদকে চিঠি দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের’ যে সব অভিযোগ উঠেছে সেগুলোকে ভিত্তিহীন, অসত্য ও অনভিপ্রেত বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন প্রশিক্ষণ ব্যয়ে আর্থিক অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যাবহারের অভিযোগও অসত্য।

নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী পরে দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এগুলোর কোনো ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না।
গত ২০২০ সালে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৩টি বড় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল ১১টি সংসদীয় শূন্য আসনে উপনির্বাচন এবং রাজধানীর ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ১১টি উপনির্বাচনের মধ্যে বিদায়ী বছরের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন, এরপর গত ১ ফেব্রæয়ারি ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন, ২১ মার্চ ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচন হয়।

গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ৪৫ হাজার ৬৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির সালাহউদ্দিন আহম্মেদ পেয়েছেন মাত্র দুই হাজার ৯২৬ ভোট। গত ১২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর শাকিল জয় এক লাখ ৮৮ হাজার ৩২৫ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তার একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির প্রার্থী সেলিম রেজা পেয়েছেন মাত্র ৪৬৮ ভোট। ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ১৫ হাজার ৯৯৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম পেয়েছেন মাত্র ৮১৭ ভোট।

ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ৪৫ হাজার ৬৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির সালাহউদ্দিন আহম্মেদ পেয়েছেন মাত্র দুই হাজার ৯২৬ ভোট। গত ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিব হাসান ৭৫ হাজার ৮২০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৬৯ ভোট। এসব নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকে অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।

প্রথম ধাপের ২৩টি পৌরসভা নির্বাচনে গড়ে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ৬ লাখ ১২ হাজার ৫৭০ জন হলেও ভোট দিয়েছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৭ জন। ইসির দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ দেখানো হয়েছে, প্রথম ধাপের সবচেয়ে বেশি ভোট পয়েছ পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভায়। সেখানে ভোট পড়ার হার ৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর সবচাইতে কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে পৌরসভাতে। সেখানে মাত্র ১৪ হাজার ১৮৮ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে ভোট বাতিল হয়েছে ৩৯টি। আর ভোট পড়েছে ৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। এ নির্বাচনে ২৩টি পৌরসভায় ফলাফলে মধ্যে ১৮টিতে আওয়ামী লীগ, ৩টিতে স্বতন্ত্র এবং ২টিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান কার্যালয় থেকে যদি অবাধ ও সুষ্ঠ নিরপক্ষ নির্বাচনের নির্দেশনা না আসে তা হলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরক্ষপ কাজ করতে পারে না। কারণ আমরা সরকারি চাকরি করি। তাই সরকারি দলের নেতাদের কথা শুনতে হয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইনকিলাবকে বলেন, বছর জুড়ে বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অভিযোগ করলেও সে গুলো আমলে নেয়া হয় না। অবাধ ও সুষ্ঠ নিরপক্ষ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে না দিয়েই এক পক্ষীয় নিবাচন করে আসছে এ কমিশন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md. Masudur Rahman ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:১২ এএম says : 0
Tolani bolle vul hobe, eta koto niche nemeche ta mapar shaddo amader nai hahahah
Total Reply(0)
Md Sanaullah ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
ইসি একজন নির্লজ্জ বেহায়া লোক, তার কোন আত্মসন্মান বলতে কিছুই নেই।
Total Reply(0)
Guljar Ahmed ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
মিথ্যা কথা!আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা আমেরিকার চাইতেও উন্নত!বাণীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার
Total Reply(0)
রাজি হোসেন ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
ইমেজ থাকলে না তলানিতে যাবে????
Total Reply(0)
নীল প্রজাপতি ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
এই লোকটা সম্পর্কে মন্তব্য করতেও রুচি বোধ করে না।
Total Reply(0)
ABDUL KUDDUSH ২ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:৩৭ এএম says : 0
Nurul huda is just good for nothing also a big lair.He , just like pupet
Total Reply(0)
মোঃ আশরাফুল হক ২ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:৫১ পিএম says : 0
২০২০ এই বছরে সবচেয়ে বেশি নিন্দিত দেশ ও নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইল, আর আছে লজ্জাহীন ব্যক্তি বাংলাদেশ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন