কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে, করছে। এই সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার দক্ষতা দেখিয়েছে। অর্থনীতিতে আসছে প্রত্যাশিত সফলতা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।
ভারতের মতো রাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ গ্রোথে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ সঙ্কোচন হলেও, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমফ) বলেছে, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়েও এবার আমরা ভারতকে অতিক্রম করে গেলাম। ভারতের গড় মাথাপিছু আয় ১৮৭৭ ডলার, আমাদের ১৮৮৮ ডলার। আর, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি অনেক আগেই। ভারতের চেয়ে আমাদের এগিয়ে থাকার ধারায় অর্থনৈতিক অর্জন বজায় থাকুক। ভারতকে পেছনে রাখতে হবে। আমরা যেন ভারতের পেছনে পড়ে না যাই, এগিয়ে থাকতে পারি, সেদিকেই যত্মবান হতে হবে।
ভারতকে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার এই ধারাটি অব্যাহত রাখতে হবে। খ্রীস্টিয় নতুন ২০২১ সালে ভারত যাতে আমাদের টপকে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করাই এবার অর্থনীতির একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য বাংলাদেশ যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ৮ শতাংশে ফিরে যেতে পারে, তাহলে ভারত আর আমাদের অতিক্রম করে যেতে পারবে না। করোনা মহামারীকালে দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারে ঠেকে গিয়েছিল। এ অবস্থা থেকে সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে এনে যতদূর উন্নীত করা হয়েছে তা কঠিন কাজ। এই কঠিন অর্জনটি নতুন বছরে ধরে রাখতে পারাটাই হবে আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় সাফল্য এবং সামনের বড় চ্যালেঞ্জ।
সারা দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ সরকারের ভালো কাজের অন্যতম দিক। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। করোনার ভয়াবহ কঠিন সময়েও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়েছে, তবে থেমে যায়নি। এসব প্রকল্পের কাজ আগামীতেও যাতে আরও বেগবান হয় সেদিকে সরকারকে সজাগ থাকা প্রয়োজন। এই ধারা অব্যাহত থাকুক।
তবে দেশে আয়বৈষম্য ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অনেক কিছুই সরকারের করণীয় রয়েছে। আয়বৈষম্যের প্রকট শিকার গরীবরা তেমন কিছুই পায়না। তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। সঙ্কটে সাধারণ মধ্যবিত্তরাও।
অন্যদিকে উচ্চবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত, ধনাঢ্যদের অনেকেই ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। যা দেশদ্রোহিতার মতোই অপরাধ। পুঁজি পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর বিনিময়ে কতিপয় ধনাঢ্য লোক বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করছে। পুঁজি ও অর্থের দুর্বৃত্তায়নের ফলে জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সার্বিক দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির কারণে পুঁজি ও আর্থিক দুর্বৃত্তায়ন চলছে।
*ড. মইনুল ইসলাম, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন ২০২১ সালে অর্থনীতির সম্ভাব্য গতি-প্রকৃতি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে গতকাল শনিবার বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলামের দেওয়া সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে অনুনিবন্ধটি লিখিত। সাক্ষাতকার গ্রহণে ইনকিলাবের উপ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান শফিউল আলম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন