বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিমানবন্দরের পরিবেশ উন্নত করতে হবে

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নোংরা-ময়লা-আবর্জনাময় পরিবেশে মশার উপদ্রব মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। তাদের মতে, চারদিকে শুধু মশা আর মশা, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ যাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই। ২৪ ঘণ্টাই মশার উপদ্রব। সরেজমিন পর্যবেক্ষণে যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, যেসব যাত্রী শেষরাতের দিকে অবতরণ করেন, তাদের অবস্থা দাঁড়ায় সবচেয়ে শোচনীয়। ভোর হওয়া পর্যন্ত তাদের বিমানবন্দরে বসে বসে মশার কামড় খাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যাত্রীদের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নিরুপায়ভাবে মশার দংশন হজম করতে হয়। কর্মচারীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পরও কোনো সুরাহা হয়নি। প্রশ্ন ওঠা সংগত, বিমানবন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও চকচকে-ঝকঝকে রাখতে এবং বিমানবন্দরের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার ও মশা-মাছি দমনে প্রতি মাসে যে লাখ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়, তার ফায়দা কী? এত টাকা খরচ করার পরও বিমানবন্দর ও তার আশপাশের পরিবেশ এত অবনত থাকে কী করে, যাতে মশা-মাছি জন্মায় এবং তাদের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে? সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তারা অবশ্য স্বীকার করতে রাজি নন, অবস্থা যতটা খারাপ বলা হচ্ছে, ততটা খারাপ। তাদের মতে, বিমানবন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে, মশা-মাছি দমনে স্প্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের দাবি, অবস্থা আরো খারাপ ছিল, এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। এই যদি ‘অনেক উন্নতি’র নমুনা, তাহলে খারাপ বলতে কী বোঝায়?
খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়েটিং রুম, ইমিগ্রেশন, কনভেয়ার বেল্ট, কাস্টমস হল, গ্রিন চ্যানেল Ñ সর্বত্রই মশার উৎপাত। কার্যত গোটা বিমানবন্দর মশার নিয়ন্ত্রণে। শুধু কি মশা? বিড়াল-ইঁদুরের দৌরাত্ম্যও লক্ষ করা যায়। ওয়েটিং রুমের সর্বত্রই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বিড়াল। রাতে উন্মুক্ত ফ্লোরে দৌড়াদৌড়ি করে ইঁদুর। নিচতলার এপিবিএন অফিসেও দেখা যায় ইঁদুরের ম্যারাথন দৌড়। উল্লেখ করা যেতে পারে, এই বিমানবন্দরকে অনেকদিন ধরেই নিকৃষ্ট বিমানবন্দর হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। গত বছর একটি জরিপ সংস্থা একে বিশ্বের নিকৃষ্টতম বিমানবন্দরের তালিকায় নবম অবস্থানে স্থান দেয়। এরপর বিমানবন্দরের পরিবেশ উন্নয়নে কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবে যে তেমন কিছু হয়নি তার সবেচেয়ে বড় প্রমাণ এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি। প্রকৃতপক্ষে এই বিমানবন্দর মশা-মাছি, ইঁদুর-বিড়ালের অভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এযাবৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও পরিবেশ উন্নয়নে যে বিপুল অর্থ খরচ হয়েছে, এখন সংগত কারণেই তার হিসাব চাওয়া যেতে পারে। বাস্তবে নয়, কাগজে-কলমে এই ব্যয় দেখানো হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। শুধু হিসাব চাওয়া বা খতিয়ে দেখা নয়, যাদের কারণে বিমানবন্দরের এই অপরিবেশ, নিকৃষ্টতম অবস্থান এবং যাত্রী ভোগান্তি, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কথাও বলা দরকার যে, সাম্প্রতিক কালে এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে।
হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। একে বলা হয় বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার। এই বিমানবন্দর দিয়েই বিদেশী মেহমান, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও পর্যটক বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ নানা উপলক্ষে এই বিমানবন্দর হয়েই বিদেশে যান এবং ফিরে আসেন। তারা সবাই নিশ্চিতভাবেই প্রত্যক্ষ করে থাকবেন, এর চেয়ে নোংরা ও অবনত পরিবেশের বিমানবন্দর বিশ্বে বিরল। একটি দেশের পরিবেশ ও অবস্থা সম্পর্কে বিদেশীদের প্রধান চাক্ষুষ ধারণা হয় সে দেশের বিমানবন্দর দর্শনের মাধ্যমে। হযরত শাহ জালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দর্শনে বিদেশীদের প্রথম ইমপ্রেশন যে অত্যন্ত নেতিবাচক হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা উচ্চকণ্ঠে প্রচার করছি, দেশের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে, এখন ইমার্জিং টাইগার বাংলাদেশ, মধ্যম আয়ের দেশ হতে আর বেশি বাকি নেই ইত্যাদি। অথচ তার কোনো প্রমাণ বিমানবন্দরে নেই। বিমানবন্দর যারা ব্যবহার করেন তাদের ট্রাভেল ট্যাক্স ও অন্যান্য মাশুল দিতে হয়। এজন্য তারা নিরাপদ ও মসৃণ যাতায়াত ও উপযুক্ত পরিবেশ প্রত্যাশা করেন। অথচ এই বিমানবন্দর দুর্ভোগ, হয়রানি ও বিড়ম্বনার জায়গায় পরিণত হয়েছে। এতে বিদেশে দেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এ বিমানবন্দরকে নিরাপদ করতে হবে। এর সার্বিক পরিবেশ উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে। এ ব্যাপারে অমনোযোগ ও উপেক্ষা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন