কুষ্টিয়ার উপজেলার প্রায় দুইশ’ বছরের পুরনো পদ্মা চরে বিদ্যুতের আলো পৌছাল। স্বপ্ন পূরণ হলো দৌলতপুরের উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী দুইটি ইউনিয়নের ৬০ হাজার মানুষের। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় এই চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। দৌলতপুর উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল প্রায় দুইশ› বছর আগে জনবসতি গড়ে ওঠে।
এমন স্বপ্নপূরণ হওয়ায় এলাকার লোকজন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একইভাবে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা জানান, পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে চরের মধ্যে বিদ্যুৎ আসবে কোনদিন কল্পনাও করিনি। সেই কল্পনা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধার কারনে এখন তারা কৃষিসহ সব সেক্টরে উন্নতি করতে পারবেন।
স্কুলপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বিদ্যুতের আলোতে পড়ালেখা করে নিজেকে আলোকিত মানুষ করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বিদ্যুৎ সুবিধার কারণে ডিজিটাল সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধার আওতায় আসবে ১৩ হাজার পরিবারসহ ৬০হাজার চরবাসী। আর এমন কথা জানিয়েছেন চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়নবাসী।
এ সময় চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে গ্রামগুলো পরিণত হয় ভুতুড়ে জনপদে। আলোর ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোও প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও রাতের অন্ধকার দূর করতে বিদ্যুতের আলো এই অঞ্চলের মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের মত।
সেখানকার মানুষের দীর্ঘ দিনের সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে। বিদ্যুতের আলো পেয়ে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। গতকাল রোববার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে ইউনিয়ন দু’টির বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব উদ্দিন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি রেজওয়ান আলী খান। এদিন চরাঞ্চলে ২২১টি সংযোগের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের যাত্রা শুরু হয়।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, চরের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিতে চলেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় চরের মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এসব এলাকায় ছোট ছোট কল কারখানা গড়ে উঠবে।
দৌলতপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) কে এম তুহিন মির্জা জানান, দূর্গম চর হওয়ায় সেখানে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন ও মামলামাল পরিবরন খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। পদ্মা নদীর মাঝ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে লাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া চিলমারী এলাকায় একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর দুই ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার পরিবার বিদ্যুতের আওতায় আসবে।
দৌলতপুর আসনের সাংসদ এডভোকেট আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, প্রতিকুলতা সত্তে¡ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মাত্র দুই বছরের মাথায় চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের যাতাযাতের জন্য রাস্তা নির্মাণ ও পদ্মা নদীর ভাগজোত পয়েন্টে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন