শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভ্যাকসিনের খবরে চাঙ্গা পুঁজিবাজার

নতুন বছরের প্রথমদিন ডিএসই’তে রেকর্ড উত্থান একদিনেই ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১৬২০৭ কোটি টাকা হুজুগে বা গুজবে নয়, সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

টানা ঊর্ধ্বমুখীতার ধারায় থাকা দেশের শেয়ারবাজার বছরের প্রথম দিনেও চাঙ্গা ভাবে ছিল। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকলেও নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবসে সা¤প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তেজিভাব দেখা গেছে। রেকর্ড উত্থান হয়েছে পুঁজিবাজারে। এর ফলে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক একদিনে ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। লেনদেন ছুঁয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। ডিএসই’তে গতকাল দিনশেষে মোট সূচক বেড়েছে ২১৬ পয়েন্ট। আর ডিএসই এক্স পৌঁছে গেছে ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে। বেড়েছে ডিএসই’র বাছাই ও শরীয়াহ্ সূচকও। দুই ইনডেক্সে যোগ হয়েছে ৫৭ ও ১১৪ পয়েন্ট। আর মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বাজারে দর বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের।

আর দরবৃদ্ধির শীর্ষে আছে সরকারের পক্ষে ভ্যাকসিন ক্রয়কারী বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের। মূলত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদনের খবরে বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হয়ে বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। গত বুধবার করোনার টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। এরপর গত শুক্রবার ওই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। এর আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। তাই এই অনুমোদনের খবরে বেক্সিমকোর শেয়ারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এদিন বেক্সিমকো ফার্মার দর বেড়েছে ১৯ টাকা। শেয়ারটি এদিন সবশেষ লেনদেন হয়েছে ২০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। অন্যদিকে বেক্সিমকোর দর বেড়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা। শেয়ারটির সবশেষ লেনদেন হয়েছে ৬২ টাকা ৭০ পয়সায়। এছাড়া আইএফআইসি, লাফার্জ হোলসিম, লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স এবং স্কয়ার ফার্মাও লেনদেনের শীর্ষে ছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। আস্থা বাড়ার কারণেই শেয়ারবাজারে এমন টানা উত্থান দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে গতকাল করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সু-খবর আশায় পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এখন যেহেতু শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই পেনিক সেল (হুজুগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করাও ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

সূত্র মতে, শিগগিরই বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের টিকা পাচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই ঘোষণায় দেশের পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৬১টি কোম্পানির মধ্যে ২৬১টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৫২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৮টির।
বিনিয়োগকারী আব্দুর রহিম বলেন, ভারতের টিকা অনুমোদন বাংলাদেশের জন্যও আশাবাদ। এর কারণ বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে টিকার জন্য চুক্তি করেছে।
গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার সিরাম ইন্সটিটিউট এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে যার আওতায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কেনা হবে। প্রথম দফায় তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার কথা রয়েছে।

গতকাল ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন এক সংবাদ সম্মেলনে অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও তাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের টিকা অনুমোদনের ঘোষণা দেয়। ভ্যাকসিনের অনুমোদনের এ খবরে পুঁজিবাজারে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি দিনের বেশিরভাগ সময় এ শেয়ারটির কোনো বিক্রেতাই বাজারে ছিল না। অন্যদিকে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

সূত্র মতে, মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই শেয়ার ও ইউনিট প্রতি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখেয়েছে। এদিন লেনদেন শুরু হতেই বড় লাফ দেয় মূল্যসূচক। লেনদেনেও দেখা দেয় চাঙ্গাভাব। শুরুর মাত্র দশ মিনিটের মাঝেই ডিএসইতে দুইশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। শুরুর এই চাঙ্গাভাব অব্যাহত থাকে দিনের শেষ পর্যন্ত। ফলে লেনদেন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।
এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৮ জুনের পর ডিএসইতে এদিন সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। গত ২৮ জুন বহুজাতিক কোম্পানি গø্যাক্সোস্মিথক্লাইনকে (জিএসকে) কিনে নেয় আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার। ফলে ওই দিন ডিএসইতে ২ হাজার ৫৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়।

গত বছর ও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। গতকাল বছরের প্রথম দিনের লেনদেন শেষে এর পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ২১৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারির পর সূচকটির সব থেকে বড় উত্থান হল। ওইদিন ডিএসই’র প্রধান সূচক বাড়ে ২৩২ পয়েন্ট। অবশ্য প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়ায় ১৯ মার্চ সূচকটি ৩৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সেদিন শেয়ারবাজারে মাত্র ৩০ মিনিট লেনদেন হয়।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসই’র অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১১৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৭৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই’র শরিয়াগহ সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিন এক শতাংশের ওপরে দাম বেড়ছে ২২০টি কোম্পানির। এর মধ্যে ১৭৭টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। ৪ শতাংশের বেশি দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১০৯টি কোম্পানি। ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। আর ৯ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে ৩৮টির।

শেয়ারবাজারে এমন বড় উত্থানের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকার শেয়ারবাজার ভালো করতে বিভিন্ন ধরনের পলিসি সাপোর্ট দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিএসইসি বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জিরো টলারেন্স নীতিতে নিয়েছে। এ কারণে বাজারের ওপর সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এ কারণেই এমন উত্থান দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে কেউ অন্যায় করে ছাড় পাবে না। এই বার্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বারবার দিচ্ছে। যে কারণে বাজারে বড় বড় বিনিয়োগকারীরাও আসছেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী অর্থের উৎস হবে শুধু পুঁজিবাজার। সরকার সেই ধরনের পরিকল্পনাই নিয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বাজার এখন চাঙ্গা। বিনিয়োগকারীদের এ সময় সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে সঞ্চয়ের একটি অংশ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে হবে। আর কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত লোভে পড়ে হুজগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abdur Razzak ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:৪২ এএম says : 0
হুজুগে বা গুজবে নয়, সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন