শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ : আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে

মো. সাইফুদ্দীন খালেদ | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনা ভাইরাস চীনে সর্বপ্রথম ধরা পড়লেও বিশ্বের প্রায়ই দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসে গেছে আমাদের শহরে, আমাদের গ্রামে। প্রতিদিন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাই। যেমনটা রোগতত্ত¡ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জানতে পারি। এখন দ্বিতীয় ঢেউ শুরু। বিগত কয়েকদিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর শুরুতেই উপসর্গ দেখে অনেক সময় বুঝা কঠিন যে, এটি ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আত্মসচেতনতা খুবই জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলার জন্য বলা হয়। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হয়ে নাক-মুখের সাবধানতার জন্য সচেতন থাকতে হবে। রোগ বিস্তার যেন বন্ধ হয় তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলকায় জনসচেতনতার ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা হয়। এর বাস্তবতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ অবস্থায় এই ভাইরাসের সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮’-এর কঠোর প্রয়োগ জরুরি। জনগণকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। মূলত যেকোন সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে মানুষ যেন নিজে বাঁচার পাশাপাশি অন্যকে সংক্রমিত না করতে পারে সে লক্ষ্যে আইনটি করা হয়। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮এর ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে সারাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিধি-নিষেধ ভঙ্গকারীদের এই আইনের অধীনেই বিচারের আওতায় আনা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮’ রচিত হয়েছে। উক্ত আইনে কারাদন্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তার নিকট গোপন করেন তাহলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। আবার যদি কোনো ব্যক্তি মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার উপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন সেক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। আবার যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্তে¡ও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন সেক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদন্ড, বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

আইন অনুযায়ী, কোন অস্থায়ী বাসস্থানের বা আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিংয়ের মালিক যদি জানতে পারেন যে তার ওই স্থানে থাকা কেউ এই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তবে অবশ্যই সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসককে জানাতে হবে। ডাক্তারদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম মানতে হবে, অর্থাৎ তার অধীনে কোন সংক্রামক রোগী চিকিৎসা হলে, সিভিল সার্জনকে রোগী সর্ম্পকে সব ধরনের তথ্য দিতে হবে। এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপীল নিস্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৬৯, ২৭০ ও ২৭১ ধারায় সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকানপাট খোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সবখানেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। খুলেছে শত শত পোশাক কারখানা, ফুটপাতে বেচাকেনা। ফলে সবখানে জনসমাগম বাড়ছে। সড়কগুলো মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদেশ ফেরতদের কঠোর স্ক্রিনিং ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করা, অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিধিগুলো মানুষ ঠিকভাবে মেনে চলছে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আইন অমান্য করে যাচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ। ভিড় লেগে আছে হাট-বাজার, চায়ের দোকানসহ প্রায় জায়গায়। প্রশাসনের নির্দেশ ও জরিমানার বিধান নিশ্চিত করার পরও মাস্ক ছাড়া মানুষ চলাচল করতে দেখা যায়। শুরু থেকেই এখানে চরম উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ আরো বেশি বাড়তে পারে। জনগণ কথা শুনছে না বা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, এমন বলে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। করোনার প্রতি অবহেলা দেখানোর সুযোগ নেই। দেশের সর্বত্র চিকিৎসাসেবা পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর টেস্টেও ফলাফল দিতে হবে দ্রুততর সময়ের মধ্যে। ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন