শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উন্নয়ন কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

বদলে যাচ্ছে নরসিংদী শহরের প্রধান প্রধান সড়কের চেহারা। রাস্তায় কালো পিচ পাথরের ঢালাই, মাঝখানে রঙিন সড়কদ্বীপ, উজ্জল সড়ক বাতি, রাতের শহরকে দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল করে দিয়েছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই রাস্তার সাথে মিশে আছে শহরেরই নির্যাতিত অভাগা মানুষের চোখের পানি। কত নিরীহ মানুষের বুকের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মিত হয়েছে। বাড়ির সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে রাস্তার চাকচিক্য বাড়ানো হয়েছে। এরপরও নরসিংদী শহরের উন্নয়ন কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও স্থায়িত্ব নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। 

মাত্র এক দশক পূর্বে তৎকালীন মেয়র লোকমান হোসেন শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় এক কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে একটি আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করেছিলেন। ড্রেনটিতে পাথরের ঢালাই দেয়া হয়েছিল। নির্মিত ড্রেনটির আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ বছর। কিন্তু ১০ বছর যেতে না যেতেই সেই ড্রেনটিকে ভেঙে সেখানে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। জনগণের এই বিপুল পরিমাণ টাকা অপব্যয়ের দায়ভার কে বহন করবে?
পৌরসভার একটি সূত্র জানিয়েছে, পাইপড্রেন, ফুটপাথ, সড়কদ্বীপসহ নতুন রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের সমুদয় টাকাই বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) কর্তৃপক্ষ থেকে ঋণ আনা হয়েছে। পাইপগুলো নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
পাইপ নির্মাণে যে লোহা ব্যবহার করা হয়েছে তা রিসাইক্লিং মেটেরিয়ালস দিয়ে তৈরি। যেসব সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তাও কোন ব্র্যান্ডের সিমেন্ট নয়। ফুটপাথ এবং সড়কদ্বীপ নির্মাণে যে সিসি বøক ব্যবহার করা হয়েছে তাও নিম্নমানের সিমেন্ট ও খোয়া দিয়ে তৈরি। রাস্তা নির্মাণে এলাইনমেন্ট ও পরিমাপ ঠিক রাখা হয়নি।
ডবল লেন রাস্তাগুলোর কোথাও ২৩ ফুট, কোথাও ২০ ফুট, কোথাও ২২ ফুট, কোথাও ২১ ফুট, আবার কোথাও ২৪/২৬ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। ২৩ ফুট রাস্তার দুই পাশে ফুটপাথ রাখা হয়েছে ১১ ফুট। অর্থাৎ সাড়ে ১১ ফুট লেনে সাথে সাড়ে ৫ ফুট ফুটপাথ রাখা হয়েছে। ফুটপাথ নির্মাণে যেসব ব্লক এবং টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে তাও অত্যন্ত মটকা। সিসি ব্লকগুলোর আকার ছোট। রাস্তায় কোন মাটি বা বালি ভরাট না করায় সিসি ব্লগগুলো ফিট করা হয়েছে এর নিজের ওজনের উপর। ব্লকের পাশে মাটির কোন সাপোর্ট না থাকায় নির্মাণের পর পরই ব্লগগুলোর পাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক ব্লক রাস্তার দিকে হেলে পড়েছে। এগুলোকে ঠিক রাখার জন্য প্লাস্টার করে চাপা দেয়া হয়েছে।
রাস্তা নির্মাণে কোন ফাউন্ডেশন দেয়া হয়নি। পুরনো রাস্তা উপরে পেভমেন্টের উপরের সীলকুটের পুরনো পিচ-পাথর ভেকু মেশিনের গ্রোভারের দাঁত দিয়ে আচড়ে আলগা করে আবার রাস্তায়ই মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। পুরনো রাস্তার শুকনো পিচ ভাঙাচোরা ধুলাবালি সব চাপা দিয়ে এর ওপর নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে চাপা দেয়া হয়েছে। এর উপর সাদা পাথরের গুড়া এবং হালকা পিচ মিলিয়ে মিলিয়ে রাস্তার কার্পেটিং করা হয়েছে। রাস্তায় গুড়া ও পিচ মিশ্রিত সীলকুট করা হয়নি।
প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, রাস্তার কার্পেটিং খুবই নিম্নমানের হয়েছে। মিশ্রণে পিচের পরিমাণ কম হওয়ায় সারা রাস্তায় পাথর খন্ড এ্যবড়ো-থ্যাবড়ো হয়ে রয়েছে। সড়কদ্বীপের উপর স্থাপিত লাইটপোস্টগুলো খুবই হালকা। ঢালাই লোহার পোস্টের পরিবর্তে স্টিল প্লেট দিয়ে তৈরি করে বসানো হয়েছে। লাইট পোস্টের মাথায় সাধারণ চিকন পাইপ বাঁকা করে তাতে বাতি লাগানো হয়েছে। যা ৪০/৫০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন শহরবাসীরা। এ ব্যাপারে নরসিংদী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ সত্য নয়। মন্ত্রণালয় ও বিএমডিএফ থেকে যেভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেভাবেই কাজ করেছি। রাস্তার কার্পেটিংয়ে কোন সিলকোট ধরা হয়নি, তাই কোনো সিলকোট করা হয়নি। রাস্তার ব্লক, টাইলস সবকিছুরই গুণগতমান পরীক্ষা করে লাগানো হয়েছে। লাইটপোস্টগুলো প্লেইন সিট দিয়ে তৈরি করার নির্দেশনা রয়েছে। রাস্তার ফুটপাতগুলো ডিজাইন এবং এস্টিমেট অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন