শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

গমের আবাদ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

গত কয়েক বছরের ছত্রাকবাহী ব্লাস্ট রোগের প্রভাবে চলতি রবি মৌসুমেও দেশে গমের আবাদ লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব হল না। চলতি মৌসুমে গম আবাদের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ৪ হাজার হেক্টর কম। অথচ অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসলের আবাদ ও উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে দেশে। স্বল্প সেচ, সহজ বালাই ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম এবং ভালো দাম পাওয়ায় নিকট অতীতে দেশে গমের আবাদ দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটে।
তবে ২০১৭ সালে আকষ্মিকভাবেই ৫টি জেলায় ছত্রাকবাহী ব্লাস্ট সংক্রমণে বিপুল গমের আবাদ বিনষ্ট হয়। কয়েকটি এলাকায় গমের জমিতে আগুন জ্বালিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে কৃষি বিভাগ। যেসব এলাকায় ব্লাস্টের সংক্রমণ দেখা দেয় পরবর্তী ৩ বছর সে জেলায় গমের আবাদ নিরুৎসাহিত করারও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ ফসল আবাদ সম্প্রসারণের পরিবর্তে তা ক্রমশ পেছাতে শুরু করেছে। তবে বিগত দুটি বছরে কিছু এলাকায় ব্লাস্টের সংক্রমণ হলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
চলতি রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গমের আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৬ হেক্টরে। তবে গত বছর দেশে গমের আবাদ হয়েছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩শ’ হেক্টরে। আর উৎপাদন ছিল ১২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩০ টনের মত। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যানুযায়ী গমের আবাদ সম্প্রসারণের পরিবর্তে ৪ হাজার হেক্টর পেছালেও উৎপাদন গত বছরের কাছে পৌঁছার ব্যাপারে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে এবার পৌষের মধ্যভাগের পর থেকেই শীতের আধিক্য হ্রাস পাওয়ায় গম উৎপাদন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
গম আবাদ ও উৎপাদনের ইতিহাস খুব দীর্ঘদিনের না হলেও খাদ্য ফসল হিসেবে তা ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করেছে। সারা বিশ্বে গম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। সত্তরের দশকে মাত্র ১ লাখ হেক্টর জমিতে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত ‘খেরী, আইপি-৫২ ও আইপি-১২৫’ জাতের গম বীজের আবাদ হত। বিদেশ থেকে ‘কল্যাণ সোনা’ ও ‘সোনালিকা’ জাতের ফলনশীল গমবীজ অমদানি করে আবাদ সম্প্রসারন কার্যক্রম শুরু করা হয়। স্থনীয় জাতের তুলনায় এসব গমের উৎপাদন প্রায় ৩ গুণ বেশী হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে গমের আবাদ ও উৎপাদন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৮৫ সালে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১২ লাখ টন গম উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্তু এরপর থেকে আবাদ সম্প্রসারণের পরিবর্তে তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। গমের আবাদ এখন সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও গম গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবেশ উপযোগী একাধিক গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। আমাদের দেশের মত কম শীতপ্রধান অঞ্চলের জন্য ‘শতাব্দী’ নামের গম বীজও উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। বারি উদ্ভাবিত গম বীজের মধ্যে ‘কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রানী, শতাব্দী ছাড়াও সৌরভ-বারি-১৯ ও গৌরব-বারি-২০’ নামেরও উচ্চ ফলনশীল গম বীজও রয়েছে। এসব বীজ থেকে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ টন থেকে সাড়ে ৪ টন পর্যন্ত গম উৎপাদন সম্ভব।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টরে এবার গমের আবাদ হয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তির্ণ নদী তীরবর্তী এলাকায় গমের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও ডিএই’র সঠিক উদ্যোগের অভাবে সম্প্রসারন ঘটছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন