রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চিলমারীতে তেল শূন্য ভাসমান তেল ডিপো যমুনা ও মেঘনা

৬৫ টাকার তেল ৬৭-৭০টাকায় বিক্রি

চিলমারী(কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ পিএম

দীর্ঘ দিন যাবৎ কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় অবস্থিত ভাসমান তেল ডিপো যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বার্জ দুটি তেল শূন্য হয়ে পড়েছে। ডিপো দু’টি তেল শূন্য হয়ে থাকায় এলাকায় তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বন্যার ধকল কাটিয়ে না উঠতেই চড়া মূল্যে তেল কিনতে হচ্ছে কৃষকদের,এ যেন “মরার উপর খড়ার ঘা”। এ নিয়ে স্থানীয় তেল ব্যবসায়ীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ডিপো দুটি তেল শুন্য হয়ে পড়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ডিলার ও খুচরা তেল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এলাকার জ্বালানি তেলের অধিকাংশ চাহিদা পূরনকারী যমুনা ডিপোটিতে প্রায় ১বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তেল শুন্য থাকায় আসন্ন সেচ মৌসুমে তেল সংকটে পড়ার সঙ্কায় রয়েছে উপজেলার হাজার হাজার কৃষক।

জানাগেছে,১৯৮৯ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভাসমান তেল ডিপো পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানী স্থাপিত হয়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলায় তেল সরবরাহ করে আসছিল। কয়েক বছরের মাথায় পদ্মা তেল কোম্পানীটি বার্জ মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এরপর থেকেই মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানী দুটি এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে তেল সরবরাহ করে আসছে। মেঘনা কোম্পানীর তুলনায় যমুনা কোম্পানীর বার্জে তেল ধারন ক্ষমতা বেশী এবং বার্জটি সুবিধাজনক জায়গায় থাকায় উপজেলার মোট চাহিদার অধিকাংশই পূরণ করে আসছে যমুনা কোম্পানী। যমুনা তেল ডিপোর আভ্যন্তরিন কোন্দলের ফলে গত বছর জানুয়ারীতে ডিপোটি তেল শুন্য হয়ে পড়ে। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ডিপোটিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় এটি তেল শুন্য রয়েছে। অপরদিকে মেঘনা তেল ডিপোটি গত ১৩ডিসেম্বর তেল শুন্য হয়ে থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে সেটিতেও তেল আসছে না। ১০-১৫ দিন আগে মেঘনা ডিপোর একটি জাহাজ ২লাখ ২৭হাজার লিটার তেল নিয়ে নাব্যতা সংকটের অজুহাত দেখিে সিরাজগঞ্জ এলাকা থেকে ফেরত চলে যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ভাসমান তেল ডিপো দু’টির অনুমোদিত ২২জন ডিলার প্রতি লিটার তেল ৬২ টাকা ৫১ পয়সায় ক্রয় করে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট সরবরাহ করেন। খুচরা বিক্রেতারা প্রতি লিটার তেল বিক্রি করতেন ৬৫ টাকায়। যমুনা ও মেঘনা তেল ডিপো দু’টি তেল শুন্য হওয়ায় পার্বতীপুর থেকে সড়কপথে তেল পরিবহন করলে ১লড়ি অর্থাৎ ৯ হাজার লিটার তেল আনতে অতিরিক্ত পরিবহন ও লেবার খরচ হয় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার টাকা। যা প্রতি লিটারে প্রায় ১ টাকা ৭৫ পয়সা বেশী। সব মিলে ডিলারদের তেল কিনতে হয় প্রায় ৬৫টাকায়। এরপর খুচরা বিক্রেতা থেকে খুচরা ক্রেতা। ফলে ক্রেতাদের তেল কিনতে হচ্ছে ৬৭-৭০ টাকায়।

উপজেলার চাহিদা মিটানোর পর নারায়নপুর, যাত্রাপুর, সাহেবের আলগা,রৌমারী,রাজিবপুর, সানন্দবাড়ী, জাফরগঞ্জ,কামারজানী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুমে ভাসমান তেল ডিপো থেকে প্রতিদিনের তেলের চাহিদা প্রায় ১হাজার ৫শ ব্যারেল বা ৩ লাখ লিটার হলেও বর্তমান সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে চালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন,জমি চাষের ট্রাক্টর,বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর,মাহেন্দ্র গাড়ী, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন যন্ত্র চালনার জন্য প্রতিদিন প্রায় আড়াই শ থেকে ৩শ ব্যারেল বা ৫০-৬০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। ডিলাররা অন্য ডিপো থেকে তেল নিয়ে স্থানীয়সহ বিদ্যমান এলাকা সমুহের তেলের চাহিদা পুরন করতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এতে প্রায় প্রতিদিন ৩লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে এলাকায় সৃষ্ট তেল বাজারে। শুধু তাই নয়,এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘ দিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতা হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিলমারীর তেল ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের নিকট পড়ে থাকা বাকী অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। অপরদিকে ডিপো দুটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন খেটে খাওয়া প্রায় ৩শ শ্রমিক কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে।
চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তেল বাজার জোড়গাছ বাজারে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় খুচরা তেল ব্যবসায়ী নুর ই আলম বাদল, রাশেদুল ইসলাম, মমিনুল, ধীরেন্দ্র নাথসহ অনেকের সাথে। তারা বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় আমরা প্রতি লিটার তেল ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। বর্তমানে দুর থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশী হওয়ায় বেশী দামে তেল বিক্রি করছি। এসময় কথা হয় ক্রেতা আফসার আলী ও সুলতানের সাথে। তারা জানায় ডিপোতে তেল না থাকায় প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় তেল কিনতে আমাদের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে অনেক টাকা। খুচরা তেল বিক্রেতা মমিনুল ইসলাম বলেন,অজানা কারনে দীর্ঘদিন ধরে ডিপো দু’টি তেল শুন্য থাকায় জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল কৃষকরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জ্বালানি তেল সংকটের ফলে বাড়তি দামে তেল ক্রয় করায় এলাকার মৎসজীবিরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও জামালপুর জেলার প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জ্বালানী চাহিদা পুরন করে আসছে ওই ভাসমান তেল ডিপো দুটি।উপরোক্ত জেলা সমুহের চরাঞ্চলের কৃষকদের বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় তারা শুধুমাত্র জ্বালানী তেলের উপর নির্ভরশীল। তাই ডিপো দুটি তেলশূন্য থাকায় সুবিধাভোগীরা তেল সংকটে ভুগছেন এবং আসন্ন সেচ মৌসুমে জ্বালানী সংকট দেখা দিতে পারে।

তেল ব্যবসায়ী নজির এন্ড সন্স এর সত্বাধিকারী মাইদুল ইসলাম জানান, পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ি থেকে সড়কপথে তেল পরিবহন করলে লিটারপ্রতি প্রায় ২ টাকা বেশি খরচ হয় ফলে ক্রেতাদের অধিক মূলে তেল কিনতে হয়। তাই জনগণের সুবিধার্থে ডিপো দুটিতে তেলের মুজদ বাড়িয়ে এ অঞ্চলে জ্বালানী তেলের সংকট নিরসন করা দরকার। তিনি আরও বলেন,বর্তমানে যমুনা তেল ডিপোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় ডিপোটি দীর্ঘ ১বছর থেকে তেল শুন্য রয়েছে। ডিপোটিতে একজন দক্ষ ডিএস নিযুক্ত করে তেল সরবরাহের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান তিনি। চিলমারী জ¦ালানী তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফুলবাবু বলেন, যমুনা ডিপোটি ১বছর ধরে ইনচার্জ শুন্য থাকায় ডিপোটিতে তেল আসছে না। এলাকার জ্বালানীর তেলের জন্য গুরুত্বপূর্ন এই ডিপো দু’টি কোম্পানীর কাছে অবহেলিত হওয়ায় এখানকার কৃষকরা চরম সংকটে রয়েছে। যমুনা ডিপোতে ডিএস নিয়োগসহ ডিপো দু’টিতে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে মেঘনা ওয়েল কোম্পানীর ডিপো সুপার(অপারেশন) মোঃ আইয়ুব আলীর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি উর্ধ্বতনদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। নদীর নাব্যতার বিষয়ে বিআইডবিøউটিএ’র ছাড়পত্র স্বাপেক্ষে তেল প্রেরন করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন