নাকের ভিতরের দেয়ালে যে নরম টিসু এবং মিউকাসের আবরণ আছে, সেগুলো অনেক সময় ইনফেকশন বা এলার্জীর কারণে সংবেদনশীল হয়ে পরে। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়। অনেক দিন ধরে যদি বিনা চিকিৎসায় থাকে, তাহলে এগুলো বেলুনের মতো ফুলে যায় ভিতেরে পানি জমে যায়। শেষ পর্যন্ত এথেকে নাকে পলিপ তৈরি হয়। ছোট বড় সবারই এই নাকের পলিপ হতে পারে। তবে ৪০ উর্দ্ধ পুরুষের এটা হওয়ার সম্ভবনা মহিলাদের চেয়ে দ্বিগুন। আবার ১০ বছরের নীচের বাচ্চাদেরও এটা হতে পারে।
লক্ষণ দেখে পলিপ কিভাবে ধারণা করা যায়?
হাঁচি, সর্দি, নাক থেকে পানি পড়া এগুলো তো হবেই, এসব সমস্যায় অনেক দিন ধরে ভুগতে ভুগতে দেখা যাবে নাক বন্ধের সমস্যা হচ্ছে। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে। সংক্রমণ বা ইনফেকশন হয়ে নাক থেকে সর্দি পড়ে। অনেক সময় সর্দি পেকে নাক থেকে পুঁজের মতো তৈরি হওয়া শুরু হয়। এই জিনিসগুলো চলতে চলতে এক পর্যায়ে স্থায়ী ভাবে নাক বন্ধ হয়ে যায়। এই লক্ষণগুলো সচরাচর নাকের পলিপ আক্রান্ত সব রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
নাকের পলিপের প্রকারভেদ এবং পার্থক্য:
চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রাথমিকভাবে নাকের পলিপকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটিকে ইথময়ডাল পলিপ বলে। আরেকটিকে এনট্রোকোয়ানাল পলিপ বলে।
ইথময়ডাল পলিপ, এগুলোর ক্ষেত্রে নাকের যে ওপরের অংশ, যাকে নাকের সেতু বলা হয়, এখানে অনেক কোষ থাকে। কোষের দেয়াল পাতলা থাকে, এগুলো ফুলে নরম টিসু হিসেবে ঝুলে পুরোটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ এলার্জী। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই ধরণের পলিপ বেশি দেখা যায়। ইথময়ডাল পলিপ সচরাচর নাকের দুই পাশেই একসাথে হয়।
এনট্রোকোয়ানাল পলিপ, যেটা মেক্সিলারি বায়ুকুঠুরি থেকে আসে, সাধারণত একদিকেই হয়। এনট্রোকনাল পলিপ যেটা, সেটা সাধারণত নাকের পেছনের দিকে গিয়ে নেসোফ্যারিংস বা গলায় গিয়ে বড় হয়ে নাকের বাতাস চলাচলের পথটাই বন্ধ করে দেয়। তখন রোগী শ্বাস নিতে পারে না। এই ধরণের পলিপ এর মূল কারণ ইনফেকশন। এনট্রোকোয়ানাল পলিপ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত বেশি হয়। যদিও এটা নাকের পলিপের মাত্র ৪-৬%।
যে ভূল/ভ্রান্ত ধারণা অপচিকিৎসার জন্ম দেয়:
অনেকেই নাকের মধ্যে সামনের দিকে ফোলা মাংসপিন্ডের মতো দেখা যায় সেটাকে পলিপ বলে ভুল করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো পলিপ নয়, এগুলোকে টারবিনেট বলে। ইনফিরিয়র টার্বিনেট দুই পাশে দুইটা বড় হাড়ের উপর মিউকাস মেম্ব্রেন দিয়ে ঢাকা স্ট্রাকচার। এরা নাকের ভিতরের বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, বাতাসকে গরম ও ভিজা রাখতে সাহায্য করে। এই ইনফিরিয়র টার্বিনেটকে পলিপ বলে হাতুরে চিকিৎসকরা বিভিন্ন অপচিকিৎসা করে। ইঞ্জেকশন, পোড়া দেয়া, কাটা ছেড়া, আরও কত কিছু করা হয়। শেষে নাকের ভিতরের পর্দা, দেয়াল, হাড় অনেক কিছুরই স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। যার অনেকগুলোই আর পরে মেরামত করা সম্ভব হয় না। পলিপটা হবে সাধারনত: সাদা, চোখের পানির ফোটা বা আঙ্গুর ফলের মতো ঝুলে আছে মনে হবে। ধারনা করা হয় প্রদাহের কারনেই মিউকাশ মেম্ব্রেনের ভিতরে ফ্লুইড অর্থাৎ পানি জমে এমনটা হয়। এটা যদি আমরা কিছু দিয়ে স্পর্শ করি এর কোনো ব্যথা বা সেন্স থাকবে না। অপরদিকে টার্বিনেট হবে একটু লালচে। আর পলিপের চারপাশে দেখা যায় ঝুলন্ত থোকার মত অনেকগুলি ফোলা অংশ।
নাকের পলিপের যথাযথ চিকিৎসা কি হতে পারে?:
পলিপ হয়ে থাকলে দেখতে হবে এটি প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ ছোট আকারের নাকি। প্রাথমিক অবস্থায় যদি খুব ছোট থাকে তাহলে নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা অ্যান্টি অ্যালার্জিক মেডিসিন দেয় এবং একই সাথে লোকাল স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে নিয়ম মেনে চললে বেশীরভাগ সময় নাকের ওই পলিপ ছোট হয়ে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর যদি পরীক্ষা করে দেখা যায়, নাকের পলিপ বেশি বড় হয়ে গিয়েছে, সেক্ষেত্রে এই পলিপ ওষুধ দ্বারা নাক থেকে দূর যায় না। তখন অপারেশন করে নাকের পলিপ সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর পলিপ অপারেশনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রকমের পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে আধুনিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারী ফেস, খুবই কার্যকর এবং জনপ্রিয়। সহজ কথায়, নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা পলিপের উৎপত্তিস্থল, আকার, সংখ্যা ইত্যাদি দেখে অপারেশন এর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী,
নাক-কান-গলা বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন