সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ঘন ঘন গ্রীড, গ্রীডলাইন ও ফিডার বিপর্যয় এবং অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প ও ব্যবসাপ্রধান নরসিংদী জেলার লাখ লাখ মানুষ ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে পতিত হয়েছে। মাত্র মাস তিনেক পূর্বে পরপর টানা ৩০ ও ১৩ ঘণ্টা দুটি ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় কাটিয়ে না উঠতেই আবারো ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীনতার শিকার হয়েছে নরসিংদী জেলা। বৃহস্পতিবার প্রায় সারা রাত নরসিংদীর বিস্তীর্ণ জনপদ বিদ্যুৎহীন এক অন্ধকার মৃতপুরীতে পরিণত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোর থেকে প্রায় ৭ ঘণ্টা কাটে বিদ্যুৎহীন অবস্থায়। জেলার কোথাও ৩০ ঘণ্টা, কোথাও ২৪ ঘণ্টা এই বিদ্যুৎ সংকটের কারণে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২’র লাখ লাখ শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহক তথা সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা অচল হয়ে পড়ে। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে পাওয়ারলুমসহ হাজার হাজার শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকে। নরসিংদী জেলা শহরসহ বিভিন্ন গ্রোথ সেন্টারগুলোর শপিংমলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অচল হয়ে পড়ে।
ছোট ছোট ফুড ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের অভাবে বরফ তৈরী করতে না পারায় হাজার হাজার টন হিমায়িত খাবার বিনষ্ট হয়ে যায়। শহর ও গ্রামাঞ্চলের আইপিএসগুলো অচল হয়ে পড়ে। এনড্রয়েড মোবাইলগুলো অচল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বাসাবাড়ীর হাজার হাজার ফ্রিজারের খাবার বেশীরভাগ নষ্ট হয়ে যায়। পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ থাকে। বহুতল ভবনের বাসিন্দারে সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হয়।
উচ্চ রক্ত চাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীরা বিদ্যুৎহীন, পানিহীন অবস্থায় প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে রাত কাটাতে বাধ্য হয়। সকালে অনেক মানুষ প্রতিদিনের নাস্তা ছাড়াই বাড়ী থেকে বেরিয়ে যেতে হয়।
ভাদ্রের তালপাকা গরমে লাখ লাখ মানুষকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সরকার বঞ্চিত হয় লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে। ৩ দিন ধরে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৮ ঘণ্টা করে সীমাহীন লোডশেডিংয়ের মাথায় বিদ্যুতের এই বিপর্যয় নরসিংদীকে এক বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত করে। এব্যাপারে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান কেন লোডশেডিং দিচ্ছে তা আমরা জানিনা। শুধু উপর থেকে বলা হচ্ছে জেনারেশন কম, লোডশেডিং কর।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানিয়েছে, গত মাস কয়েক ধরে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর সরবরাহ লাইনে প্রতিদিন কমবেশী ১০ থেকে ২০টি করে গোলযোগ দেখা দিতে থাকে। এছাড়া এক ঘণ্টা আধা ঘণ্টা করে লোডশেডিংও চলতে থাকে অব্যাহতভাবে। অতি ঘন ঘন বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও লোডশেডিংয়ের কারণে নরসিংদীর মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন