প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের ফলে সন্তান জন্মের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং সন্তানকে তার ওয়ারিশ হিসেবে স্বীকৃতি দানের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক। গতকাল রোববার দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিজ্ঞ বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এ রায় দেন। এ সময় অভিযুক্ত ধর্ষক আবুল কালাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, রংপুরের পীরগাছার হরিরাম গ্রামের এক বাক প্রতিবন্ধী নারীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন চাচাতো বোনের স্বামী প্রতিবেশী আব্দুল জলিলের ছেলে আবুল কালাম। এ নিয়ে তাকে নিষেধ করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর বিকেলে কৌশলে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন কালাম। এর কিছুদিন পর মেয়েটির শারীরিক পরিবর্তন হলে এলাকায় বিষযটি নিয়ে কানা-ঘুষা শুরু হয়। এ ব্যাপারে মেয়েটিকে তার পরিবারের লোকজন জিজ্ঞেসা করলে ইশারায় আবুল কালামকে চিহ্নিত করে ধর্ষণের বিষয়টি জানায়। এ নিয়ে একাধিকবার শালিসে বিয়ের কথা বললে আবুল কালাম তাতে অসম্মতি জানান। কিছুদিন পর ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মেয়েটি গুরতর অসুস্থ হয়ে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিলে তাকে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ নিয়েও স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার শালিসী বৈঠক হলেও আবুল কালাম ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার এবং সন্তানের স্বীকৃতি প্রদানে অসম্মতি জানালে মেয়েটির বাবা নিরুপায় হয়ে ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আবুল কালামকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ২৫ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন তৎকালীন পীরগাছা থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুস সামাদ সরকার। পরে জন্ম নেয়া শিশুর এবং ধর্ষকের ডিএনএ পরীক্ষা ও ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দীর্ঘ ১১ বছর পর গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ আদালত।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন। তিনি বলেন, যাবজ্জীবন কারাদন্ড ছাড়াও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ধর্ষকের ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তির অংশীদারিত্বের রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক। যদি ধর্ষকের কোনো সম্পত্তি না থাকে তাহলে ওই শিশুর ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন