মহামারী করোনার কারণে একে একে বন্ধ হচ্ছে শিক্ষানগরী রাজশাহীর কিন্ডারগার্টেন গুলো। অনেকে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। চেয়ার টেবিল বেঞ্চসহ আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়েছে। এর সাথে জড়িত হাজার হাজার শিক্ষক আর কর্মচারী তাদের কর্ম হারিয়েছে। এসব কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষক হিসাবে বেশীরভাগ ছিল মহিলা। যারা উচ্চ শিক্ষা নেবার পর চাকরি না পেয়ে খুব সামান্য বেতনে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল যেখানে সন্তানদের ভর্তির জন্য অভিভাবকরা প্রতিযোগীতা করতেন। লক্ষ্য সন্তানদের ছোট থেকে তাদের শিক্ষার ভিত মজবুত করা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সব প্রতিষ্ঠানই প্রায় বন্ধ। নেই শিক্ষার্থী ভর্তি, নেই কর্মচারীদের বেতন। দীর্ঘ সময় পর আশা নিয়ে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। চালানো হচ্ছে ভর্তি কার্যক্রম। কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তির তেমন সাড়া মিলছে না। শিক্ষার্থী ভর্তিতে তেমন সাড়া না পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে রাজশাহীর কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। বন্ধ হয়ে যাওয়া কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো খোলা হলেও শিক্ষার্থী সঙ্কটের মুখে পড়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চালালেও সন্তানদের ভর্তির ব্যাপারে অভিভাবকরা এক প্রকার অনিহা প্রকাশ করছেন। এমনিতেই মানুষের আয় কমেছে। বেশী টাকা দিয়ে কিন্ডারগার্টেনে সন্তানদের ভর্তির সামর্থও কমেছে। এতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো রীতিমত উভয় সঙ্কটে ভুগছে। যতটুকু শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে তা দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব না বলে মনে করছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে আশায় আছেন দু’এক মাসের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া ও সরকারিভাবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ওপর।
জানা গেছে, রাজশাহীতে এসোসিয়েশন ভূক্ত ১৫৩টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। এসোসিয়েশন ছাড়াও রাজশাহীর আনাচে কানাচে গত ২০১৯ সালের অন্তত আরো ৫০টি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। করোনার কারণে গত বছরের মার্চ মাসে সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্ধ হয়ে যায় এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুল। বিশেষ করে নতুন ভাবে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠান খুলেন। বিশেষ করে করোনার কারণে একেবারে শতাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সরিয়ে নেয়া হয় সাইনবোর্ড। আর বাকি স্কুলগুলো ডিসেম্বর থেকে খোলা হয়। দেয়া হয় শিক্ষার্থী ভর্তি বিজ্ঞপ্তি। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও ভর্তি নেই বললেই চলে। হঠাৎ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর অভিভাবকরা একপ্রকার দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে পড়েছে। তাদের সন্তানদের আদৌ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করাবেন কিনা এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী মার্চ পর্যন্ত দেখার পর অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। কারন শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে শিক্ষকদের বেতন হবে না, হবে না ঘর ভাড়া। মালিক পক্ষ মনে করেছিলেন এবার আশানুরুপ শিক্ষার্থী ভর্তি হলে বিগত দিনের লোকসান কিছুটা হলেও উঠবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ বেশী হওয়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়েছে এসব স্কুল। অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বিগত দিনের বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক কর্মচারীদের মোটা অঙ্কের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে বাড়ি ভাড়া ও শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তির যে হার তাতে এই মোটা অংকের টাকা মালিকদের পক্ষে পরিশোধ করতে পারবে না। আর এই অবস্থায় মার্চের পরপরই অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে এমনটাই ভাবছে মালিকরা।
বেশকিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর চাহিদা পূরণ না হলেও মোটামুটি ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। কিন্তু এবার এই চিত্র পুরোটাই উল্টো। গত ডিসেম্বর থেকে এখন নামিদামি কিন্ডারগার্টেন গুলোতেই শ’ এর কোটা পূরণ হয়নি। খুব বেশি শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো পাবে এমনটা আশা করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। এরপরই সিদ্ধান্ত হবে তারা স্কুল রাখবেন কি বন্ধ করে দিবেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় রাজশাহী কিন্ডারগার্টেন স্কুল এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম সারওয়ার স্বপনের সাথে। তিনি জানান, সরকার চাইলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারতো। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য আন্দোলন করা হয়েছে। মানববন্ধন জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারবলিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আছে। তাদের চিন্তা এখন সেই ঋনের পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে। স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো করো পক্ষেই স¤ম্ভব হচ্ছে না। তাই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন