মানুষের জীবনে শৈশব যদি সোনালি সকাল হয় তাহলে বার্ধক্য অবশ্যই পড়ন্ত বিকেল। শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্য প্রবেশ মানেই নানাবিধ রোগের অনুপ্রবেশ। মানুষের জীবনে বার্ধক্য এমন এক সময় যখন শরীর ও মন দুটোই দুর্বল হয়ে পড়ে। আর যারা অসংযমী জীবনে অভ্যস্ত, বার্ধক্য তাদের কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। জীবন সায়াহ্নে শরীরে নানা ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি বাসা বাঁধার ফলে বেঁচে থাকাটাই হয়ে উঠে দুর্বিষহ। তবে একটু সতর্ক থাকলে বার্ধক্যেও থাকা যায় নীরোগ ও তরতাজা। অবশ্য এ রকম থাকতে গেলে চাই সংযমী জীবনযাপন ও নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। সুষম খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি, নিয়মিত শরীরচর্চা, প্রাতঃভ্রমণ ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম মানুষকে দীর্ঘজীবী করে তোলে। রোগমুক্ত ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে প্রত্যেকেরই উচিত নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রেখে আহার গ্রহণ করা। অতিরিক্ত চর্বি, ঝাল মশলা, ফাষ্ট ফুড যতটা এড়িয়ে চলা যায় ততই রোগে ভোগার সম্ভবনা কম থাকে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, বার্ধক্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টপূর্ণ খাবার খান। বার্ধক্যে শরীরের ভেতর যে অস্থায়ী অক্সিজেন অণুর সমাহার ঘটে, সেসব ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য চাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি পাওয়া যায় রঙিন শাকসবজি ও ফলে, রঙিন সবজি, বিট, মূলা, টমেটো ইত্যাদিতে। প্রচুর সুষম খাদ্য খেলে ক্যানসার, হৃদরোগ এসব রোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। প্রতিদিন প্রচুর রঙিন ফল-শকসবজি খাবেন।
টুনা ও স্যামন মাছের কথা বলা হয়, তবে এ দেশীয় মাছও খুব ভাল। মাছে ডিএইচএ এবং ইপিএ থাকে, যা মগজ ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য বড় হিতকর। সপ্তাহে কয়েক বেলা মাছ খেলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে অনেকটা। চর্বিযুক্ত মাছেও আছে ওমেগা-৩। এটা কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সহায়ক। প্রদাহ রোধ হয়ে হার্টের বড় রোগ অ্যাথারোস্কেলরোসিস, হার্ট অ্যাটাকও প্রতিরোধ হয়।
শিম (বিন) তা যে কোনও বর্ণ-আকারের হোক যথেষ্ট গুণসমৃদ্ধ। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন খাবারে শিম থাকা চাই, আঁশসমৃদ্ধ শিম। আঁশ কমাতে সাহায্য করে রক্তচাপ। কোলেস্টরলও কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, হজমও বাড়ায়। পেট ভরাট লাগে দীর্ঘসময়, কম খেতে হয়, ওজন কমাতে তাই আঁশসমৃদ্ধ খাবার সহায়ক। শিমের বীচি, মটরশুঁটি, বরবটি খাওয়া যায় নিরামিষে, এমনকি মাছের কোলেও। কেবল আঁশ কেন? শিমে রয়েছে জটিল শর্করা, এতে রক্তে গ্লুকোজের মান নিয়ন্ত্রণ হয়, ডায়াবেটিক রোগীদের যা বেশী প্রয়োজন।
ভেজ, ভেজি, সবজি যা-ই বলি এতে রয়েছে আঁশ, ফাইটোনিউড্রিয়েন্ট, প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ। এসব ক্রনিক রোগ থেকে রক্ষা করে গাঢ় সবুজ পত্রবহুল সবজিতে ভিটামিন কে-ও আছে যা মজবুত হাড়ের জন্য কাজে আসে। মিষ্টি আলু ও গাজরের ভিটামিন-এ (বিটা ক্যারোটিন) চোখ ও ত্বক রাখে সুস্থ, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা। বেশি বেশি এলডিএল কমায় আর বাড়ায় এইচডিএল। তবে বাদাম চর্বিমুক্ত নয়। এক আউন্স আখরোটে থাকে ১৬০ ক্যালরি। তাই বেশি নয়।
ভিটামিন ডি ও ক্যালমিয়াম আছে দুধে। ভিটামিন ডি ফারটিফাইড দুধ ক্যালসিয়াম শোষনে সহায়ক। তাই যাঁদের ওস্টিওপরেসিস হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁদের জন্য দুধ ভাল। ঘরে পাতা দই, টক দই খুবই স্বাস্থ্যকর।
আটার রুটি, ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত কমায় ক্যানসার টাইপ-২ ডায়াবেটিক, হৃদরোগের ঝুঁকি। বার্লি দিন স্যুপে। আটা রুটির খাদ্যগুণ প্রচুর। শরীরকে হালকা রাখে। শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে রাখলে হাড়ের গিঁটে চাপ পড়ে কম। হার্টে চাপ পড়ে কম, ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। তবে বুড়ো হলে ওজন ঝরানো আবশ্যক, পেশি শরীর দৃঢ় হয়ে যায়, বিপাক হয় শ্লথ। তবু চেষ্টা করা উচিত। নিয়মিত হাঁটার।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন