শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

চট্টগ্রাম নগরীতে পানিবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চসিকের নানামুখী উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি ছাড়াই ভিন্ন এক ধরনের পানিবদ্ধতার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে লাখ লাখ নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্দরনগরীর অনেক এলাকায় সড়ক, রাস্তাঘাট ও অলিগলি কাদাপানিতে একাকার হয়ে থাকে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে শুষ্ক মৌসুমে প্রায়ই সাগর ও নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। বৃষ্টি না হলেও নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, চাক্তাইসহ কিছু নি¤œাঞ্চল কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে যায়। পানিবদ্ধতা চট্টগ্রাম মহানগরীর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা। বছরের পর বছর ধরে অপরিকল্পিত নগরায়ন, নগরীর নালা-নর্দমা, খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে পয়ঃনিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, পলিথিনসহ সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা জমে নালা-নর্দমা-খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াসহ মানুষের অসচেতনতার কারণে পানিবদ্ধতা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। পানিবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়।
নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানিবদ্ধতার প্রধান কারণসমূহ হলো : ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্লান বাস্তবায়িত না হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ¯øুইস গেট না থাকা, বৃষ্টির সাথে পাহাড়ের মাটি নেমে আসা, বৃষ্টির সাথে জোয়ারের পানি প্রবেশ, খাল-নালা, সরকারি ডোবা, জলাধার ইত্যাদি অবৈধভাবে দখল করে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক গতিরোধ করা, পাইলিংয়ের মাটি নালা-নর্দমায় ছেড়ে দেয়া, ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে না ফেলে নালা-নর্দমায় ফেলা, সাম্প্রতিককালে দ্রæত নগরায়নের ফলে নগরীর বিদ্যমান জলাশয় খাল-বিল-ঝিল, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি ক্রমাগতভাবে বিলুপ্ত হওয়া ইত্যাদি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, পানিবদ্ধতা নিরসনকল্পে বেশ কয়েকটি খালের মুখে প্রয়োজন অনুসারে পাম্প হাউসসহ ¯øুইস গেট নির্মাণে যথাযথ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চসিক পানিবদ্ধতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর চাক্তাই খাল, মির্জা খাল, রাজা খাল, চশমা খাল, নাছির খাল, বির্জা খাল, খন্দকিয়া খাল, গয়নারছড়া খাল, বামুনশাহী খাল, কাট্টলী খাল, ত্রিপুরা খাল, ডোম খাল, শীতল ঝর্ণা খাল, হিজরা খাল, মহেশ খাল, ডাইভারসন খালসহ নগরীর বিভিন্ন খাল ও নালা-নর্দমা থেকে মাটি অপসারণের জন্য ১৬৮টি দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অতিরিক্ত দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করে এবং নিজস্ব ও ভাড়ায় চালিত স্কেভেটর দ্বারা অন্যান্য খাল ও নালা হতে নিয়মিত মাটি উত্তোলন ও অপসারণের মাধ্যমে খাল ও নালাসমূহ পরিষ্কার এবং কার্যকর রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে চলমান বর্ষা মৌসুমে পূর্বের তুলনায় পানিবদ্ধতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য যান্ত্রিক শাখায় পাঁচটি নতুন ড্রাম্প ট্রাক, একটি স্কেভেটর এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। সম্প্রতি চীনা বিশেষজ্ঞ দল চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে পানিবদ্ধতা সমস্যাযুক্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্তমানে তাদের সমীক্ষা চলমান রয়েছে।
এদিকে নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ মাস্টারপ্লানের আওতায় ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২.৯ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে একটি নতুন খাল খনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রকল্পটি শেষ হবে। এ প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর মূল অংশের পানিবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে। বর্তমানে জাইকার অর্থায়নে সিজিপি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৮০.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশ খাল, ডাইভারসন খাল এবং বির্জা খালের পাশে প্রতিরোধ দেয়াল ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা সম্পূর্ণরূপে নিরসনকল্পে ১৯৯৫ সালের ইউএনডিপি কর্তৃক প্রণীত ড্রেনেজ মাস্টারপ্লানে প্রস্তাবিত অন্য প্রকল্পগুলোর অনুমোদন পাওয়া গেলে মহানগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন