রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। শহরের পাইকপাড়ার নুরুদ্দিন মিয়ার তিনতলা বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে গত শনিবার সকালে বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভবনে অভিযান চালাতে গেলে গোলাগুলি শুরু হয়। ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’ নামের এক ঘণ্টায় অভিযানে তামিম ও ওই দু’জন নিহত হয়। তামিম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। ‘নব্য জেএমবি’র প্রধান হিসেবে চিহ্নিত তামিমকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। তার সঙ্গে আরো যে দু’জন নিহত হয়েছে তাদের পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়নি। যতদূর জানা গেছে, তাদের একজনের নাম তৌসিফ হোসেন, বাসা ঢাকার ধানমন্ডিতে। অপর জনের নাম ফজলে রাব্বি, বাড়ি যশোর সদর উপজেলায়। জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে একে এক বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। সরকারের ওপর মহলে এ অভিযান ও তার সাফল্য ব্যাপক গুরুত্ব ও প্রশংসা পেয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমরা মনে করি, তামিম চৌধুরী চ্যাপ্টার শেষ হয়েছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, আরো বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল তামিম চৌধুরীর। এই সফল অভিযানের ফলে সে আশঙ্কা দূরীভূত হয়েছে। এমত প্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে পুলিশের এই অভিযান ও সাফল্য ধন্যবাদার্হ।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া তৎপরতার পরিচয় বহন করে। ওই দুই হামলায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নিরপরাধ মানুষই হত্যা করেনি, দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ভীতি-সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে, বহির্বিশ্বে দেশের মানমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে। ওই দু’ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে দেশে ও বিদেশে। সরকার শুরু থেকেই হামলাকারী ও ঘাতকদের গ্রেফতার এবং মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান এবং অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় ৯ জন জঙ্গি নিহত হয়। তখন পুলিশের তরফে বলা হয়, জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিল। যা হোক, ওই অভিযানের পর স্বভাবতই জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। নারায়ণগঞ্জে অভিযানের পর সেই স্বস্তির মাত্রা যে আরো বৃদ্ধি পাবে তাতে সন্দেহ নেই। সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী কঠোর অবস্থান, লাগাতার অভিযান ও তার সাফল্য জনগণ সঙ্গতকারণেই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে এবং এর পেছনে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন, ঘোষিত ও চিহ্নিত জঙ্গি ও মাস্টারমাইন্ডদের যদি জীবিতাবস্থায় পাকড়াও করা সম্ভব হতো তাহলে তাদের সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা সম্ভব হতো এবং বিভিন্ন জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়া সহজ হতো।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। ভ্রান্ত মতবাদের নামে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ হত্যা করবে, সন্ত্রাস ও নাশকতা চালাবে তা কোনো অজুহাতেই বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। অবশ্যই কঠোর অভিযান ও ব্যবস্থার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে। এই সঙ্গে জঙ্গি মতবাদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের একটি আন্তর্জাতিক রূপ দাঁড়িয়ে গেছে। কোনো দেশই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হুমকি থেকে নিরাপদ নয়। এ কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে অব্যাহত অভিযান চালানোর পাশাপাশি জঙ্গি মতবাদ প্রতিহত করারও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মতবাদ দিয়েই মতবাদ ঠেকাতে হবে। জঙ্গি মতবাদ যে ভ্রান্ত মতবাদ, এর পেছনে যে ধর্মের কোনো সমর্থন নেই সে কথা ব্যাপকভাবে জানান দিতে হবে। ধর্ম কী বলে, কী নিষেধ করে সে কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। জঙ্গি মতবাদের ভ্রান্তি তুলে ধরে সঠিক মতবাদ প্রচার করা হলে বিভ্রান্তি দূর হবে এবং সন্ত্রাসী-জঙ্গি হওয়ার পথ সঙ্কুচিত হবে। সরকারকে এদিকে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিতে হবে। দেশের আলেম-ওলামা, ধর্মবেত্তা, বিদ্বৎজন ও সচেতন ব্যক্তিদের কাজে লাগাতে হবে, সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন