শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

উপকূলে বিশেষ কম্বিং অপারেশন শুরু

কারেন্ট জালসহ ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ উপকরণ প্রতিরোধ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

জাটকা এবং সামুদ্রিক মাছের ডিম, লার্ভী ও পোনা রক্ষায় নিষিদ্ধ ঘোষিত মৎস্য আহরণ উপকরণ বন্ধে উপকূলীয় অঞ্চলে ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন’ শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে দেশের উপকূলীয় ১৭টি জেলায় বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জাল ও ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ উপকরণ সমূহ প্রতিরোধসহ কার্যকরিভাবে বন্ধে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ কার্যক্রম চলবে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে বাংলাদেশে নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব ও পুলিশ ছাড়াও জেলা প্রশাসনসহ সরকারি মোট ৭টি সংস্থা একযোগে কাজ করছে। 

প্রথম পর্যায়ে গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত উপক‚লীয় এলাকায় এ ধরনের অভিযানে বিপুল সংখ্যক কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জালসহ বিভিন্ন ধরণের নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর মৎস্য উপকরণ বাজেয়াপ্ত করে মৎস্য অধিদপ্তর। দেশের ইলিশসহ সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা এবং তা আরো সমৃদ্ধ করতে জাটকা নিধন বন্ধের পাশাপাশি গত বছরও উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ উপকরসমূহ ধংসে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। যার সুফল ইতোমধ্যে মিলতে শুরু করেছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
এ কর্মসূচির আওতায় বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের সাথে এবার গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’তে মৎস্য সেক্টরের অবদান ৩.৫০শতাংশ। আর কৃষিজ আয়ের ২৫.৭২ শতাংশ আসে মৎস্য উপখাত থেকে। আর দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশই যোগান দেয় মাছ। বর্তমানে মানুষের দৈনিক গড়ে চাহিদার ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২.৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহন করছে দেশের মানুষ। পাশাপাশি দেশের ১২শতাংশ মানুষ কোন না কোনভাবে এখন মৎস্য সেক্টর থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। যার মধ্যে ১৪ লাখ নারী। গত ১ নভেম্বর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে জাটকা আহরণ, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ রয়েছে। বর্তমান বিশেষ অভিযান চলমান থাকলে আগামীতে ইলিশসহ দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মৎস্য অধিপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। গত এক দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন সোয়া ২ লাখ টন থেকে প্রায় ৫.৩৩ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে জানা গেছে। যা চলতি অর্থ বছরে ৫.৪০ লাখ টনে ও আগামী অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হবার সম্ভবনার কথা জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছওে দেশেমাছের উৎপাদন চিল ৪৩.৮৫ লাখ টন।
২০১৮-এর ৭-২৮ অক্টোবর আহরণ বন্ধ থাকাকালে উপক‚লের প্রজননস্থলসহ অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ৪৮শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩ শতাংশ থেকে ’১৮ সালে ৯৩ শতাংশে বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এসময়ে প্রজনন সাফল্যও ৮০ শতাংশ উন্নীত হয়। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ফলে ২০১৮ সালে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০শতাংশ সাফল্যজনক পরিস্ফুটন ও ১০ শতাংশ বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকাযুক্ত হয়। এমনকি গতবছর প্রজননকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমূহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩শতাংশ ইলিশের রেণু পাওয়া গিয়েছিল। এসময়ে ঐসব এলাকায় ১৭ শতাংশ অন্যান্য মাছের রেণু পোনা পাওয়া যায়।
এসব রেণু ও লার্ভী সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার লক্ষেই ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ উপকরণাদী বন্ধে বর্তমান বিশেষ কম্বিং অপরাশেন পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক। তার মতে, দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য বড় ধরণের হুমকি কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জালসহ এসব ক্ষতিকর মৎস্য উপকরণসমুহ। এসব ক্ষতিকর উপকরণসমূহ চিহ্নিত করেই সরকার তা বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন