দুশ্চিন্তা, হতাশা ও বিষন্নতায় ভোগা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। ছেলেদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও বাদ যান নি শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটা পরিসংখ্যান থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওই পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ এর জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মোট ২৪০ জন মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চিকিৎসা নিয়েছেন সেবা কেন্দ্রটি থেকে। মূলত ৫টি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দুশ্চিন্তার কারণে ৭৯ জন, বিষন্নতার কারণে ৯৭ জন, ওসিডি ১৭, আতঙ্ক নিয়ে ১৪ জন, পার্সোনাল ডিসঅর্ডার নিয়ে ৩৩ জন সেবা নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনওয়ারুল হাসান সুফী বলেন, এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি বেশ উদ্বেগজনক। করোনা পরিস্থিতিতে লক ডাউনের মাঝে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে এই কেন্দ্রটি। এরই মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরাতে পেরেছেন বলেও জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সুফী বলছিলেন, আমাদের সেন্টার থেকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে ছিলেন আত্মহত্যা প্রবণ। বেশ কয়েকটি সেশনের পর তাদের প্রায় সবাই ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়। এমন পরিস্থিাতিতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য রোল মডেল হিসেবে দাঁড়াতে পারে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।
এদিকে পরিসংখ্যান বলছে ছেলেদের তুলনায় বেশি সেবা নিয়েছেন শিক্ষার্থী ৮৪ জন ও মেয়ে ছিলেন ১২৭ জন। মেয়েদের সেবা নেওয়ার পরিমাণ বেশি থাকার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থসামাজিক অবস্থানের কারণে বিভিন্ন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হন। সেবা প্রার্থীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ার পেছনে এ কারণটির ভূমিকা থাকতে পারে।
শুধু শিক্ষার্থীরা নন, সেবা নেওয়ার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যা কেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছেন শিক্ষকরাও। সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে সংখ্যা কম হলেও শিক্ষক ছিলেন ১৭ জন। সাধারণত পারিবারিক সমস্যা, নিদ্রাহীনতা ও হতাশাজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উপস্থিত হন শিক্ষকরা বলে জানায় সেবা কেন্দ্রটিতে কর্মরতরা।
এছাড়া বিভিন্ন ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার ধরণ ও সময় সম্পর্কে জানা গেছে, আলাদা আলাদা ভাবে ২১১ জন ব্যক্তি ৩২৫ বার ব্যক্তিগত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট ও সর্বনিম্ন ৩০-৪০ মিনিট সেবা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭৮টি গ্রুপ সেশনে ১৮০ জন এ সংক্রান্ত সেবা নেন। যার সর্বোচ্চ ব্যপ্তি ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট ও সর্বনিম্ন ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন