চট্টগ্রাম ব্যুরো : রাস্তার উপর যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করা হচ্ছে। ব্যস্ত সড়কে ট্রাক দাঁড় করিয়ে নামানো হচ্ছে মালামাল। সড়কের দুই পাশ দখল করে রাখা হয়েছে সারি সারি গাড়ি। নগরীর প্রতিটি প্রবেশ পথসহ গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়েই যানবাহনের জটলা। রাস্তা ফুটপাত দখল করে বসেছে বাজার, রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। এমন চরম বিশৃঙ্খল চট্টগ্রাম মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। ফলে তীব্র যানজটে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরীর বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম নগরীতে নেই কেন্দ্রীয় কোন বাস টার্মিনাল। শহর এলাকা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী হাজার হাজার বাস রাখা হচ্ছে রাস্তায়। অন্যান্য যানবাহনের জন্য নেই টার্মিনাল। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। যানবাহন রাখা হচ্ছে সড়ক দখল করে। বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল।
এসব টার্মিনালের ভারী যানবাহন রাখা হচ্ছে রাস্তায়। মহানগরীতে সড়ক স্বল্পতার পাশাপাশি রয়েছে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থার অভাব। সবমিলিয়ে এ মহানগরী যানবাহনের ভারে এখন টালমাটাল অবস্থা। রাজধানী ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও স্থায়ী রূপ নিচ্ছে যানজট। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেও মহানগরীর প্রতিটি সড়কে ছিল তীব্র জট। যানজটে পড়ে লোকজনকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে আমদানি-রফতানিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাÐ।
সেখানে বাস, মিনিবাস, টেক্সি টেম্পু, রিকশাসহ সব ধরনের যানবাহনের জটলা। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং বান্দরবান অভিমুখি সব গণপরিবহন সড়কে অবস্থান নিয়ে যাত্রী তুলে। এতে সেখানে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল কিংবা দামপাড়া কাউন্টার থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাস ওই এলাকা পার হতেই সময় লেগে যাচ্ছে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা। আবার কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুট থেকে আসা যানবাহনগুলোও মহানগরীতে প্রবেশের সময় ওই জটলা পার হচ্ছে। সেতু এলাকায় জটলার প্রভাবে সেতুর দুই পাড়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে প্রতিদিন।
বন্দরের ১৪ নং জেটি ঘাট থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং স্টীল মিল থেকে কাটগড় হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে দুই পাশে গড়ে উঠেছে অংসখ্য বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল। এসব টার্মিনালের লরিসহ ভারী যানবাহনের বেশিরভাগ রাখা হয় রাস্তা দখল করে। এতে করে বিমানবন্দর সড়কের বিশাল অংশ বেদখল হয়ে গেছে। অবশিষ্ট সড়কে যানবাহন চলতে গিয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে পাশে রয়েছে কর্ণফুলী ইপিজেড ও দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড চট্টগ্রাম ইপিজেড। পতেঙ্গা শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় রয়েছে অনেক কল কারখানা। এসব কলকারখানার যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে এই সড়কে। বিমানবন্দর থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত আসতে রাস্তায় চলে যাচ্ছে এক থেকে দেড় ঘন্টা। এর প্রভাবে শেখ মুুজিব রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, পোর্ট কানেকটিং রোড এবং টোল রোডেও যানজট হচ্ছে।
বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক, জাকির হোসেন রোডসহ আশপাশের সবকটি সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। আগামী মাসে নগরীর বারিক বিল্ডিং থেকে কাটগড় পর্যন্ত সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। অক্টোবর থেকে নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় শুরু হবে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কাজ। প্রধান সড়কে একসাথে এতে উন্নয়ন কাজ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একই অবস্থা নগরীর কদমতলী ফ্লাইওভারেও। ওপরে যানবাহনের চাপ নেই, নীচে তীব্র জট। বিআরটিসি মোড় থেকে শুরু করে কদমতলী বাসটার্মিনাল পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নীচের সড়ক প্রায় পুরোটায় বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে পার্কিং করে রাখা হয়ে সবজি ও ফলবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহি বাস। ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে ব্যস্ততম এই সড়কে টার্মিনাল বানিয়ে নিয়েছে চালকেরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ উল হাসান বলেন, কেউ ট্রাফিক আইন মানতে চায় না, তাই বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। বেশ কিছু বাস্তব সমস্যাও রয়েছে। নগরীতে যানবাহনের তুলনায় সড়ক কম। নেই কোন কেন্দ্রিয় বাস বা ট্রাক টার্মিনাল। ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাও দুর্বল। এসব কারণে সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সকলের সহযোগিতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করে যানবাহন চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। এর পাশাপাশি গণপরিবহনে ছোট গাড়ির বদলে বড় গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে হবে। বন্দর এলাকা ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজস্ব বাস চালু করা গেলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন