পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শিগগিরই বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। গত রোববার শিক্ষামন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে কোন ব্যক্তি সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া হাইস্কুল বা নবম-দশম শ্রেণী পর্যায়ের স্কুল, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর মানের কলেজ এবং নবম-দশম শ্রেণীর মানের দাখিল ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর মানের আলিম মাদ্রাসা স্থাপন করতে পারবে না। যদি পাহাড়ি এলাকা, চর ও দুর্গম অঞ্চলসহ কোথাও একান্ত প্রয়োজন হয় তবে তা সরকার স্থাপন করবে। যদি এধরনের অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন হয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে কেউ স্থাপন করতে চায় তাহলে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। সরকারের নির্দিষ্ট কমিটি আগে সরেজমিন পরিদর্শন ও অনুসন্ধান চালাবে। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়া হবে। এ সংক্রান্ত বৈঠকে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেখা গেছে, দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বিশেষ করে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা একটি বাংলা দৈনিককে জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী এরইমধ্যে ভেবেচিন্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার জন্য একমাস ধরে বিভিন্ন ফাইল, নোট ও মৌখিকভাবে অনুশাসন ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দেশে অনুমোদন ছাড়া কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে দেয়া হবে না। এবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির পর দেখা গেছে, প্রায় ৭ লাখ আসন শূন্য। এটা প্রমাণ করে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। অন্য খবরে বলা হয়েছে, একটি কলেজ থেকে একযুগেও পাস করেনি কেউ। তবু প্রতিবছর পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রয়েছে কলেজটির। অরেকটি কলেজ থেকে দু’জন পরীক্ষা দিয়ে দু’জনই অনুত্তীর্ণ। সেই কলেজ হচ্ছে সরকারি। এমপিওভুক্ত হয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এধরনের অনেক উদাহরণই রয়েছে সারাদেশে। আমরা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও দেখেছি যেখানে প্রকৃত শিক্ষার জন্য নয় বরং শিক্ষার নামে এক ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষার প্রসার ও মানের পরিবর্তে মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এমনিতেই গত কিছুদিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে কথা উঠেছে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন। সে প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে নজর দেয়া যে জরুরি হয়ে উঠেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নাম কামানো বা প্রতিষ্ঠিত হবার বাসনা থেকে বা রাজনৈতিক কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। এধরনের প্রবণতা এখন আর কাম্য নয়। এক সময় ছিল যখন প্রকৃত শিক্ষানুরাগীরা অনগ্রসর সমাজকে এগিয়ে নিতে নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতেন। এখন হয়েছে তার উল্টো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। অথচ শিক্ষাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। এসব দিক-বিবেচনায় যত্রতত্র বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি যৌক্তিক এবং সুবিবেচনাপ্রসূত। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এর আগে নিম্ন মাধ্যমিক বা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল।
দেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসেবের সাথে তাল মিলিয়ে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খুব কমই রয়েছে। হয়ত কোথাও অতিরিক্ত আবার হয়ত কোথাও বিপুল ঘাটতি রয়েছে। সে তুলনায় আশার কথা যে, দেশে জনসংখ্যার তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পর্যাপ্ত। এর ফলে শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সকলের সম্মিলিত ও সমন্বিত চেষ্টার সুফল হিসেবেই এটা অর্জিত হয়েছে। এখন এ অর্জন ধরে রাখতে বা এথেকে প্রকৃত সুফল পেতে হলে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি বজায় রাখা জরুরি। দেশে এখন প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষাখাতেই অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। এই বরাদ্দ কাজে লাগাতে হলে অবশ্যই অপব্যয় বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অবারিত করতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষম বণ্টন প্রয়োজন। শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগ ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রকৃত বিবেচনায় তারই প্রতিফলন ঘটেছে। বিশেষ বা অনগ্রসর এলাকার জন্য বিশেষ সুবিধার সুযোগ রেখে যে সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে তার সফল বাস্তবায়নই কাম্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন