স্টাফ রিপোর্টার : মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে পুলিশের বাধায় ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক একটি সংগঠন। শনিবার সকালে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ নামের সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মী গুলশান-২ এলাকায় জড়ো হলে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে তারা বনানী মাঠে জড়ো হয়ে দুপুরে আবার মিছিল নিয়ে এগোতে চাইলেও পুলিশ সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। তখন বনানী মাঠে সমাবেশ করে সংগঠনটি।
সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সকাল ৯টায় গুলশান-২ নম্বর চত্বরে জড়ো হলে সেখানে কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল আহাদ তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ক‚টনৈতিক পাড়ায় এই ধরনের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে তিনি তাদের সরে যেতে বলেন।
গুলশান ২ নম্বর চত্বরে জড়ো হতে না পেরে ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা পশ্চিম দিকে সরে এসে বনানী মাঠে অবস্থান নেয়। এরপর সোয়া ১১টার দিকে বনানী মাঠ থেকে বেরিয়ে তারা আবার খালেদা জিয়ার বাড়ির পথে মিছিল শুরু করলে পুলিশ সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। মিছিলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নানা ¯েøাগান ও বক্তব্য দেয় তারা।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, কূটনৈতিক পাড়ায় মিছিল, সভা-সমাবেশের মতো কোনো ধরনের কর্মসূচি পালনের বিধান নেই। তাই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মানা করেছি।
পরে বনানী মাঠে সমাবেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের অপরাধ কম হয়েছিল এটা বিএনপি নেত্রী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা কমাতে পারলে বুঝি পাকিস্তানের অপরাধ কমে যাবে।
সমাবেশে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ আরাফাত বলেন, বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। তার বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। এই নেত্রীকে উৎখাত করতে পারলে দেশে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থি রাজনীতি চালাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শহীদ আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক করবেন আর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ বসে থাকবে, তা হবে না। এমন আইন চাই, রক্ত দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জন সেটা নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘বলা হয়, এত লাখ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও বিতর্ক আছে যে, আসলে কত শহীদ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। এর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ দরকার।
দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত থেকে সমন জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলপন্থি বিভিন্ন সংগঠন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এর ধারাবাহিকতায় শনিবার খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি দেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কের বাড়ি ঘেরাওয়ে এর আগেও সরকার সমর্থক সংগঠনগুলোর মিছিল আগেই আটকে দিয়েছিল পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য করায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের নেতৃত্বে গত ২৯ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে ছাত্রলীগ ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গতকালের ঘেরাও কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান, সেক্টর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মেয়ে মেহজাবিন মোশাররফ, শেখ ফজলুল করিমের ছেলে ব্যারিস্টার শেখ নাঈমসহ অন্যরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন