বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিক্ষাবৃত্তি নতুন কিছু নয়। অভাবে পড়ে, নিঃস্ব হয়ে, কাজ না পেয়ে যেমন অনেকে বাধ্য হয়ে ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে, তেমনি সুদীর্ঘকাল ধরে পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তিও চলছে। করোনাকালে এই ভিক্ষুকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজকল্যাণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে ৫০ হাজার ভিক্ষুক রয়েছে। তবে করোনাকালে এ সংখ্যা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে আড়াই লাখ হয়েছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এসব ভিক্ষুক ভিক্ষা করছে না। রাস্তা-ঘাটে, মার্কেটে যেখানেই যাওয়া যাক না কেন, ভিক্ষুকরা এসে ঘিরে ধরছে। এদের মধ্যে পেশাদার ভিক্ষুকের পাশাপাশি নতুন ও অপেশাদার ভিক্ষুকও রয়েছে। সংকোচ বা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে অপেশাদার ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করা যায়। অন্যদিকে, পেশাদার ভিক্ষুকরা নিঃসংকোচ এবং নাছোড়বান্দার মতো লেগে থাকে। রাজধানীতে পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তিকে কেন্দ্র করে অর্ধশত ভিক্ষুক কল্যাণ সমিতি গড়ে উঠেছে। তারা ভিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে। এসব সমিতির সদস্য হয়ে এবং নিয়মিত চাঁদা দিয়ে পেশাদার ভিক্ষুকরা নগরীর সর্বত্র ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন রাজধানীতে ভিক্ষা বাণিজ্যের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়। মাসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। বিপুল এই বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এলাকাভিত্তিক ভিক্ষুক সিন্ডিকেট এবং লাইনম্যান গড়ে উঠেছে। এই ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।

ভিক্ষাবৃত্তি কোনো পেশা নয়। সরকারও ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও এ পেশায় মানুষ দিন দিন জড়াচ্ছে। একশ্রেণীর সিন্ডিকেট দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিঃস্ব ও অসহায় মানুষকে সংঘবদ্ধ করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামিয়ে দিচ্ছে। নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দৈনিক ভিত্তিতে নির্ধারিত অংকের অর্থের বিনিময়ে তাদের দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে। পেশাদার ও সংঘবদ্ধ এই ভিক্ষুক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সমাজকল্যাণ অধিদফতরে যেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তেমনি তাদের পুনর্বাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই। তবে করোনাকালে ভিক্ষাবৃত্তিতে নতুন মাত্রা দেখা দিয়েছে। পেশাদার ভিক্ষুকের সাথে অপেশাদার ভিক্ষুক যুক্ত হয়েছে। করোনার ধাক্কায় লাখ লাখ মানুষ বেকারে পরিণত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এ হিসেবে, দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী দরিদ্রে পরিণত হয়েছে। অতি দরিদ্রের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। করোনাকালেই দেখা গেছে, রাজধানীতে টিকতে না পেরে অনেক পরিবার গ্রামে চলে গেছে। দরিদ্র হয়ে পড়া অনেকে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে হাত পাততে নেমেছে। তাদের হাত পাতার ধরণ দেখেই বোঝা যায়, তারা ভিক্ষাবৃত্তিতে নতুন। ইনকিলাবের প্রতিবেদনেও কর্মহারা হয়ে অনেক মানুষের বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করার কথা উঠে এসেছে। পেশাদার ভিক্ষুকের পাশাপাশি তারা ভিক্ষা করছে। সরকার করোনার মধ্যে সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচি হিসেবে ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে তিন মাস নগদ অর্থসহায়তা দিলেও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট হয়নি। ফলে ভিক্ষুকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভিক্ষুকের এই সংখ্যা বৃদ্ধি এবং দেশের অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া দেশের অর্থনীতির দুর্বল চিত্রই প্রকাশ করছে। ভিক্ষুক বেড়ে যাওয়ার এই চিত্র দেশের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, কর্মপ্রত্যাশী ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন কেউই মানুষের কাছে হাত পাততে চায় না। একবেলা-আধবেলা খেয়ে হলেও জীবন চালিয়ে নিতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালায়। যখন কর্মের সংস্থান না হয়, সংসার ও জীবন চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন নিরুপায় হয়ে হাত পাততে হয়।

পেশাদার হোক, অপেশাদার হোক, দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সুলক্ষণ নয়। এটা আর্থসামাজিক নিরাপত্তার দুর্বলতা প্রকাশ করে। সরকার ও দেশের ভাবমর্যাদা এবং যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে এটা বেমানান। এমতাবস্থায় সরকারকে যেমন ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমনি পেশাদার ভিক্ষুক ও তার সিন্ডিকেটকে নির্মূল করতে হবে। যেসব পেশাদার ভিক্ষুক সমিতি রয়েছে এবং যেসব প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকতা করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। এলাকাভিত্তিক উদ্যোগ নিয়ে ভিক্ষুকমুক্ত করতে হবে। যারা ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত তাদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনে সরকারের যে প্রকল্প রয়েছে, তা জোরালো করতে হবে। যেহেতু সরকার ঘোষণা করেছে, কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না, তাই সরকারের সামাজিক সুরক্ষার যে কার্যক্রম রয়েছে, তার আওতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
এন+ইসলাম ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৩৪ এএম says : 0
পেশাদার ভিক্ষুকরা ইসলাম ধর্মকে তামাশার বিষয়ে পরিণত করেছে । মসজিদ / মাদ্রাসার নামে এমনভাবে চাঁদাবাজি করে, যেন ইসলাম ধর্ম ভিক্ষাবৃত্তির সনদপত্র দিয়েছে । বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে মাইক লাগিয়ে মসজিদ / মাদ্রাসার নামে চাঁদা উঠানো বহু আগে থেকে চলে আসলেও বর্তমানে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে । এইসব টাকার কতটুকু মসজিদ / মাদ্রাসা পায় ? এব্যাপারে মানুষকে সচেতন করাার জন্য আলীম সমাজকেই নেতৃত্ত্ব দিতে হবে । কয়েকজন আলীম/উলামা সাহেবদের সাথে কথা বলে দেখেছি, তাঁরা বিষয়টি মোটেই ভাল চোখে দেখেননা, কিন্তু বিভ্রান্তি সৃষ্টির ভয়ে মুখ খোলেননা ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন