শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ফেরি ও পরিবহনব্যবস্থা বাধাহীন রাখতে হবে

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আর মাত্র ১১ দিন পরেই ঈদুল আজহা। কোরবানীর জন্য সারাদেশ থেকে লাখ লাখ গরু-ছাগল, মহিষ-ভেড়া ঢাকাসহ বিভাগ ও জেলা শহরগুলোতে পরিবহন শুরু হতে যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় হঠাৎ ফারাক্কার সøুইস গেটগুলো খুলে দেয়ায় পদ্মা অববাহিকা অঞ্চল আবারো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পদ্মায় অপ্রত্যাশিত পানিপ্রবাহে তীব্র ভাঙনে ভিটেবাড়ি ও সহায়সম্পদ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। নদীতে প্রবল স্্েরাতের কারণে আরিচা, দৌলতদিয়া, পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে অস্বাভাবিক নদীভাঙনে ফেরিঘাটের পন্টুনসহ স্থাপনাসমূহ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলো সময়মতো ও ঠিকমতো সার্ভিস দিতে না পারায় পদ্মার ফেরিঘাটগুলোর উভয় পাশে অস্বাভাবিক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, সোমবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে হাজারো ট্রাক-বাস আটকা পড়েছে। প্রবল স্রোতে একেকটি ফেরিঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভাসিয়ে নেয়ার কারণে দু’ঘণ্টার রাস্তা ৫-৬ ঘণ্টা লেগে যাওয়ায় ঘাটের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটারের পরিবহন জট সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে লাখো মানুষ। বিশেষত পচনশীল কাঁচামাল ও পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকে পড়ায় ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
মাসের শুরুতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় লাখো মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বানের পানি নেমে যাওয়ার পর সেখানে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, মেরামত ও পুনরায় জমি আবাদের প্রস্তুতি গ্রহণের মধ্যেই ফারাক্কায় পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েক দিন আগে থেকেই শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দিতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে নদীতে সৃষ্ট স্রোতের তীব্রতা এবং অস্বাভাবিক ভাঙন এবং বন্যার দুর্ভোগকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে মেনে নিলেও আসলে আমরা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের শিকার, যা উজানে গঙ্গার পানিব্যবস্থাপনায় ভারতের খামখেয়ালিপনা থেকে উদ্ভূত। শুকনো মওসুমে পানির অভাবে সেচ প্রকল্পগুলো অচল হয়ে পড়ায় হাজার হাজার হেক্টর ধানিজমি অনাবাদি রাখতে বাধ্য হয় কৃষকরা। আবার বর্ষায় উজান থেকে ছেড়ে দেয়া পানিতে তলিয়ে যায় জনপদ, ফসলি জমি এবং ভাঙনে সর্বস্ব হারায় হাজার হাজার পরিবার। এভাবেই প্রতি বছর এদেশের কোটি কোটি মানুষ বৈরী প্রকৃতি ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অপরিণামদর্শিতার শিকার হচ্ছে। কোটি মানুষের সাংবাৎসরিক দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক ক্ষতি আমাদের জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রাখছে।
গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী ঢাকা শহরে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আগামী সপ্তাহে রাজধানীসহ সারাদেশে অস্থায়ী পশুর হাট বসবে এবং ঈদকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা- বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ফেরি চলাচল, নৌপথ ও সড়ক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদ্যমান সমস্যা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ফেরিঘাটগুলোতে চলাচলরত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ফেরি ও পন্টুন বদলে ফেলার ত্বরিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ফেরিঘাটে অহেতুক ভোগান্তি, বিশৃঙ্খলা এবং ভাঙা ও ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার কারণে যেন অস্বাভাবিক যানজটের সম্মুখীন হতে না হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সে বিষয়ে আগেই বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার সাথে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতরগুলোর একশ্রেণীর কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষত নদীভাঙন ও পানি ব্যবস্থাপনায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির খেসারত দিচ্ছে দেশের মানুষ। নদীভাঙন প্রতিরোধ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ফেরি চলাচল নির্বিঘœ রাখতে প্রতি বছর এসব খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট গ্রহণ করা হলেও বাজেটের বড় অংশই অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা, উপযুক্ত নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের সাংবাৎসরিক দুর্ভোগ কমিয়ে আনা সম্ভব। কোরবানীর ঈদ সামনে রেখে ফেরি চলাচল নির্বিঘœ করার মাধ্যমে কোরবানীর পশু ও পণ্য পরিবহনের বাধা ও ঝক্কি দূর করার কার্যকর ও ত্বরিত উদ্যোগ গ্রহণ করবেন কর্তৃপক্ষÑ এটাই সকলের প্রত্যাশা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন