করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে লোকজন যেভাবে সতর্ক হয়ে চলাফেরা করেছে বর্তমানে তেমনটি আর দেখা যায় না। গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব অনেকটা দৃশ্যমান ছিল। সংক্রমণ কমে আসার সাথে সাথে চিত্রপট দ্রæত পাল্টাতে শুরু করেছে।
করোনার শুরুতে স্যাভলনমিশ্রিত পানি স্প্রে করার বোতলসহ সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি বেড়ে যায়। এর সাথে উপজেলা শহর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে চায়ের ফ্ল্যাক্সের ব্যবহার অনেক বেড়েছিল। করোনা সংক্রমণ কমে আসার সাথে সাথে রোকজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। আর স্প্রে করার বোতল ও চায়ের ফ্ল্যাক্স পরিত্যক্ত হতে শুরু করেছে।
করোনার প্রথম থেকে অর্থাৎ লকডাউনের শুরুতে চায়ের ফ্ল্যাক্সের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। বাজার করতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি ছিল। তবে জরুরি প্রয়োজনে বের হলেও বাইরে চায়ের স্বাদ মেটাতে দোকান খোলা পাওয়া যেত না। আর এ সুযোগ বেড়ে যায় ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতাদের কদর। বাজারের পাশে কিংবা মহল্লার অলিগলিতে সন্ধ্যা নামলেও ফ্ল্যাক্স নিয়ে চা বিক্রেতাদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা ও সান্তাহার পৌরসভায় ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতাদের কদর বেড়ে যায়। বিক্রেতারা বাসা-বাড়ি থেকে চা বানিয়ে ফ্ল্যাক্সে করে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। একজনের কাছে একাধিক ফ্ল্যাক্স ছিল স্বাভাবিক বিষয়।
কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় লোক চলাচল কমে যাওয়ায় টং দোকানগুলোতে বিক্রি একেবারেই কমে যায়। ফলে জীবিকার তাগিদে টং দোকান বন্ধ করে বিকল্প হিসাবে ফ্ল্যাক্সে করে চা বিক্রির পথে নামেন। আর তারা এর সুফল দ্রুত পেতে শুরু করেন। বিশেষ করে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল শুরু হলে ফ্ল্যাক্সে চা বিক্রির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।
করোনার শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছিল গরম পনি দিয়ে গড়গড়া করা ও গরম খাবার খাওয়া। এর ফলে সবার কাছে চায়ের কদর বেড়ে যায়। ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতারা একাধিক ফ্ল্যাক্সের মধ্যে চায়ের পাশাপাশি গরম পানিও রাখতেন। ওয়ান টাইম গ্লাসে চা বিক্রি ও একই গ্লাসে অনেকে গরম পানি নিতেন গড়গড়া করার জন্য। দিনের একটি বিশেষ সময় লোকজন ঘরের বাইরে বের হতেন। আর সে সময়টাতে চা ও গরম পানি বিক্রি বেশি হত।
করোনার সংক্রমণ কমে যেতে শুরু করায় ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতাদের সংখ্যাও কমে গেছে। বর্তমানে রেলওয়ে জংশন, স্টেশন, বাস টার্মিনালে এদের দেখা যায়। তবে হাট-বাজারে যথারীতি চায়ের দোকান চালু রয়েছে। আর টং দোকানগুলো আগের মতোই খোলা। ফলে ফ্ল্যাক্সে করে চা বিক্রির সেই রমরমা দিন এখন আর নেই।
ফ্ল্যাক্স ব্যবহারের ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার ফ্ল্যাক্সের মুখের ঢাকনা ভেঙে গেছে। এমন ধরনের ফ্ল্যাক্স বর্তমানে শহরের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সান্তাহার শহরের ঘোড়াঘাট বটতলির চা দোকানি শিবিন বলেন, করোনার সময় এক হাজার ২০০ টাকার ফ্ল্যাক্স কিনতে হয়েছে তিন হাজার টাকায়। ঘুরে ঘুরে চা বিক্রিতে সংসারের চাকা সচলসহ ফ্ল্যাক্স কেনার টাকা হাতে এসেছে। তবে টানা ৮ মাস ঘুরে চা বিক্রি করার মাধ্যম সেই ফ্ল্যাক্স নষ্ট হয়ে গেছে। তার মতো অনেকেই নষ্ট ফ্ল্যাক্স রাস্তার পাশে ফেলে দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন