রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রাণীশংকৈলে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও নৌকা মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৫, আটক ১

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:২৫ পিএম

আসন্ন চতুর্থ ধাপে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে বুধবার রাতে নির্বাচনী এলাকায়় আ'লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বহিস্কৃত পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিউল ইসলাম ভিপি (কম্পিউটার প্রতীক) নিয়ে পৌরসভার রংপুরিয়া মার্কেট এলাকায় শাসক দলের মোস্তাফিজুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা কালে উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে আহত হয় ৫ জন।

বর্তমানে তারা রাণীশংকৈল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধানী রয়েছেন। আহতরা হলেন কম্পিউটার প্রতীকের সমর্থক ৬নং ওর্য়াড আ’লীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম (৬৫) তার ছেলে বেলাল হোসেন (৩৫) ও পৌর আ’লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মতিউর রহমান (৪৫) তার স্ত্রী মিশিরণ বেগম (৩৫) ও নৌকার সমর্থক হোসেগাঁও ইউপির উজধারী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ফুল মিয়া (৩৮)। এদের মধ্যে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কম্পিউটার প্রতীকের সমর্থক মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এ নিয়ে দুই পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করেছে। এতে কম্পিউটার প্রতিকের এক সমর্থককে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান(নৌকা) ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আ’লীগের সম্পাদক
(বহিস্কৃত) রফিউল ইসলামের(কম্পিউটার) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় ।

উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যেই আ’লীগের চার বিদ্রোহী প্রার্থী রফিউল ইসলাম(কম্পিউটার) রুকুনুল ইসলাম (রেল ইনিঞ্জন) সাধন কুমার বসাক(নারিকেল গাছ) ও নওরোজ কাউসার কানন(চামুচ) ঐ রাতেই রংপুরিয়া মার্কেটে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে তারা এক মৌণ মিছিল নিয়ে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে রুদ্ধতার বৈঠক করে।

ঘটনার সুত্রপাত পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মদনের বাড়ীতে। মদনের স্ত্রী বিষদেবী জানান,আমাদের এলাকায় নৌকার কর্মিরা ভোটারদের টাকা মুড়িয়ে দিয়ে হাতে হাত রেখে ভোট দেওয়ার ওয়াদা করাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার বাড়ীতেও আমাদের জাতিয়া নারী রুমকি আমার হাতে টাকা গুজে দিয়ে ওয়াদা করায় ভোট দিতে। পরে আমি তাদের সামনে টাকা খুলে দেখতেই দেখি টাকায় মোড়ানো তুলসি পাতা। তুলসি পাতা আমাদের ধর্মের বড় একটি বিষয়। তাই এভাবে ভোট নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদ করায় নৌকার সমর্থকরা আমাদের বাড়ীতে এসে হট্রগোল বাধায়। পরে কম্পিউটার প্রতীকের লোজনের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একইভাবে ঐ এলাকার ধনদেবের স্ত্রী বুধি(৫০) পুদ’র স্ত্রী ববিতা বলেন, আমাদের কাছেও ভোট নেওয়ার জন্য একশত করে টাকা দিয়েছে।


আ'লীগের বিদ্রোহী মেয়়র প্রার্থী রফিউল ইসলামের অভিযোগ নৌকার ভোট কর্মিরা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে হিন্দু সম্প্রদায় এলাকায় টাকায় মোড়ানো তুলসি পাতা দিয়ে ওয়াদা করে ভোট নেওয়ার চেষ্টাকালে এক হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী এর প্রতিবাদ করায়। তার উপর চড়াও হয় নৌকার কর্মি রুমকি।এ নিয়ে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়।খবর পেয়ে শাসকদলের মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান তার দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে ঐ পরিবারের লোকজনকে হুমকি ধুমকিসহ শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে এবং ঐ এলাকার পঞ্চম নামে মুরব্বীকে চড় থাপ্পর দেয় নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই।

পরে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হক পৌর আ’লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম আ’লীগ নেতা আহাম্মদ হোসেন বিপ্লব ও নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নিজে পুলিশের উপস্থিতিতে কম্পিউটার প্রতীকের রংপুরিয়া মার্কেটে নির্বাচনী অফিসে হামলা চালায় তার কর্মীদের ওপর।

নৌকার সমর্থকদের মারপিট থেকে নিজ স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে এক গৃহবধুও লাঞ্চিত হয়েছে। গুরুতর আহত মতিউর রহমান গত বুধবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হকের নির্দেশে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় নৌকার সমর্থকরা। আ’লীগের সভাপতি আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ ও দিয়েছিল।

অপরদিকে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,আমার লোকজনের উপর উল্টো কম্পিউটার প্রতিকের লোকজন হামলা করেছে। এতে আমার এক কর্মি গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছে। তাছাড়া কম্পিউটার,নারিকেল গাছ ,ক্যারামবোর্ড, চামুচ রেল ইঞ্জিন প্রতিকের প্রার্থীরা এক যোগ হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে তিনি টাকায় মোড়ানো তুলসি পাতা দিয়ে ওয়াদা করে ভোট নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ ফিরোজ আলম জানান, গতকাল রাতের ঘটনায় মোট ৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তবে রোগীদের অবস্থার বেগতিক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাদের ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে রেফার্ড করেছি।

অফিসার ইনচার্জ এস এম জাহিদ ইকবাল গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে বলেন,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত রাতের ঘটনায় দুই পক্ষের মামলা নেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার প্রতিকের এক সমর্থককে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের ধরার চেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন