শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রাজউককে দুর্নীতিমুক্ত ও গতিশীল করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কথিত দুর্নীতির মামলায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দু’জন সিনিয়র প্রকৌশলী পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে রাজউকে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দুই প্রকৌশলীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শ্রমিক লীগের নেতৃত্বে রাজউকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাস্তায় নেমে আসেন এবং বুধবারের মধ্যে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়ে সব কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তারা রাজউক ভবনে অবস্থিত দুদকের কার্যালয়টিও বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। রাজউকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। একইভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়। আলোচ্য ক্ষেত্রে দুদক রাজউকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের নানা ছুঁতোয় হেনস্থা করতে ফাঁদ পেতেছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজউক শ্রমিকলীগের এক নেতা। দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারী দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পরস্পর বিরোধী অবস্থানে চলে যাওয়ায় রাজউকে সৃষ্ট অচলাবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাও গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ ও জেল-জরিমানার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেখানে দুর্নীতির অভিযোগে আটক হওয়ার কারণে রাজউকে অচলাবস্থা সংশ্লিষ্টদের জন্য কোন ভাল উদাহরণ নয়।
রাজধানী ঢাকা নগরীকে একটি আধুনিক নিরাপদ, জনবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম দায়িত্ব রাজউকের। অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকা-কে গতিশীল ও দর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য কার্যকর নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অন্যতম দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা ছাড়া উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সরকারী দলের প্রতিপক্ষ দমনে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় দুদকের অতি মাত্রায় আগ্রহ থাকলেও অনেক গুরুতর ও বড় বড় রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগ আছে। এমনকি দুদক কর্মকর্তাদের মধ্যেও কারো কারো বিরুদ্ধে আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পদ থাকার অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে দুদককে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে প্রথমে দুদককে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর গড়ে উঠতে হবে। তবে দুদকের কর্মকা- যেন সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও গতিশীলতার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় বা প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়ায় সে বিষয়েও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বিগত দশকে চারদলীয় জোট সরকারের সময় দুর্নীতির আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের নাম পর পর তিনবার প্রথম স্থানে উঠে এসেছিল। এর ধারাবাহিকতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও অব্যাহত ছিল। সে সব দুর্নীতির সূচক নিয়ে বিরোধীদল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য এসেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাজোট তার নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে প্রতিশ্রুতির সাথে বাস্তবতার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত বছর প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) সিপিআই বা দুর্নীতির ধারণা সূচকে দেখা যায়, মহাজোট ও বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আমলা ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা দেশে-বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধসম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ থাকলেও দুদকের কাছ থেকে দায়মুক্তি নিয়ে তাদের অনেকে নির্দোষ হিসেবে গণ্য হয়েছেন, এমন অভিযোগও অনেক। পক্ষান্তরে আইনগতভাবে দুদকের স্বাধীনতা নিয়ে যত কথাই বলা হোক, দুদকের কর্মকা-ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ দুদকের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট তৈরী করেছে। এ কথা ঠিক যে, দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা দুর্নীতির বিষবৃক্ষ একদিনেই উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু আইনগতভাবেই দুদককে স্বাধীন ও শক্তিশালী হিসেবে গণ্য করলে হবে না, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরী। রাজউকের দু’জন কর্মকর্তা দুদকের হাতে আটক হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজউকে অচলাবস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক তৎপরতা এ ক্ষেত্রে একটি বাস্তব উদাহরণ। দুদকের বিরুদ্ধে রাজউক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যমূলক হয়রানি করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা কতটা সঠিক তা যেমন আমলে নেয়া প্রয়োজন, পক্ষান্তরে যত বড় প্রভাবশালী কর্মকর্তাই হোন, দুর্নীতির অভিযোগে ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। গত কয়েক মাসে রাজউক এবং দুদকে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সকল অদক্ষতা ও দুর্নীতির বদনাম ঘুচিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে, এটাই কাম্য। রাজউক চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী কোন অন্যায় দাবীর কাছে মাথানত না করে রাজউকের সামগ্রিক কর্মকা-ে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন বলে সকলে বিশেষভাবে প্রত্যাশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন