শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সংকট দিন দিন বাড়ছে। পুরনো গ্যাসকূপের গ্যাস যেমন ফুরিয়ে আসছে, তেমনি নতুন গ্যাসকূপ আবিষ্কার ও গ্যাসপ্রাপ্তি সংকুচিত হয়ে আসছে। এতে দেশে গ্যাসের সংকট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব তিতাস গ্যাস কোম্পানি পালন করলেও প্রায়ই গ্রাহকদের তীব্র গ্যাস সংকটে পড়তে হয়। গ্রাহকরা নিয়মিত বিল পরিশোদ করেও চাহিদা মাফিক গ্যাস পাচ্ছে না। এর উপর প্রায় প্রতি বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে গাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় ২.৭ বিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে শতকরা ৫৬ ভাগ আবাসিক খাতে সরবরাহ করা হয়। সবচেয়ে বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হয় রাজধানীতে। এখানে ২৮ লাখের বেশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ আছে। এর বাইরে আরও অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এই অবৈধ সংযোগই রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানের গ্যাস সংকট তীব্র করে তুলছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে তিতাসের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারির জড়িত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তারা মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কমিটি তিতাসসহ গ্যাস কোম্পানির একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারির অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে জড়িত থাকার কথা বলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ সংযোগের অভিযোগ শুধু গ্যাসের ক্ষেত্রেই নয়, পানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও রয়েছে।

দেশে গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একই সাথে সংকটও তীব্র হয়ে উঠছে। বর্তমানে ৭.২৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের রিজার্ভ রয়েছে। এ গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে প্রায় ২৯টি গ্যাসফিল্ডের মাধ্যমে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমির নিচে থাকা আবিষ্কৃত গ্যাসের রিজার্ভ ২০৫০ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে। তারা বঙ্গোপসাগরে থাকা গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিচ্ছেন। গ্যাস উত্তোলনের কারিগরি সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। বিদেশী কোম্পানির মাধ্যমে ন্যায্য শেয়ারভিত্তিকভাবে উত্তোলনের ব্যবস্থা নিলে হয়তো গ্যাস সংকট কাটানো যাবে। গ্যাস সংকট সামাল দিতে সরকার বিগত কয়েক বছর ধরে নতুন সংযোগ দেয়া বন্ধ রাখে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বৈধ গ্যাস লাইনের সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকেনি। এই সংযোগ দেয়া নিয়ে এক ধরনের হরিলুট চলছে। তিতাস গ্যাসের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারি অবৈধ সংযোগ দেয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামাই করে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বস্তি থেকে শুরু করে অনেক আবাসিক এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে, এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিতাসের সংশ্লিষ্টরা জড়িত না থাকলে অবৈধ সংযোগ থাকার কথা নয়। অবৈধ সংযোগের সাথে কোনো কোনো সংসদ সদস্য জনপ্রতিনিধিও যুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট জড়িয়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে লুণ্ঠন চলছে এবং সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু গ্যাসের ক্ষেত্রে তা নয়, বিদ্যুৎ ও পানির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের অসংখ্য অবৈধ সংযোগ রয়েছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে বৈদ্যুতিক বাতির ধরণ অনুযায়ী প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিল তোলা হয়। এভাবে হাজার হাজার বাতি থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে। এমনিতেই ফুটপাতে কোনো দোকান থাকার কথা নয়, ফলে সেখানে বিদুৎ সংযোগ থাকারও প্রশ্ন ওঠে না। অথচ চোখের সামনে এসব অবৈধ সংযোগ থাকা সত্তে¡ও বিদুৎ বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ওয়াসার পানি সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে ওয়াসার অসাধু একটি শ্রেণী বিপুল অংকের অর্থ তুলে নিচ্ছে।

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি-এই তিন গুরুত্বপূর্ণ সেবাখাত থেকে সংশ্লিষ্ট অসাধু ও দুর্নীতিবাজ চক্র অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে যে বিপুল অর্থ লুটপাট করছে, তা বন্ধ করা গেলে সরকারের কোষাগারে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব জমা হতো। এ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারির সীমাহীন দুর্নীতির কারণে সরকার বিপুল অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদের কারণে বৈধ সংযোগকারিদের যেমন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, তেমনি উচ্চমূল্য দিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। বিশ্বের কোথাও সেবাখাত নিয়ে এমন অনাচার ও অনিয়ম দেখা যায় না। আমরা কথায় কথায় যে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেই, ক্ষুদ্র এই দেশটিতে সেবাখাতের অবৈধ সংযোগ বলতে কোনো কিছুই নেই। অথচ আমাদের দেশে এই অনিয়ম বছরের পর বছর ধরে চলছে। এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঠিকই, তবে তাদের এ ক্ষোভ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কতটা গ্রাহ্য করবে তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে প্রায়ই নানা অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও দিক নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। বাস্তবে তাদের সুপারিশ বা দিকনির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখা যায় না। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মতো সেবাখাতে দুর্নীতির যে মহোৎসব চলছে তা বন্ধে অবশ্যই কার্যকর ও স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ সংযোগ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে যারা এবং যত প্রভাবশালী জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ সংযোগের এই দুর্নীতি বছরের পর বছর চলতে পারে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
parvez ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:০৭ এএম says : 0
আরও একটু খুলে বলা দরকার ছিল। কারণ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ যে কোন মিস্ত্রীর সাহায্যে নেয়া যায়। কিন্তু অবৈধ হলেও গ্যাস সংযোগ তিতাসের মিস্ত্রি ছাড়া নেয়া যায় না।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন