বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রূপগঞ্জে আশার আলো ই-কমার্স

পিছিয়ে নেই নারী উদ্যোক্তারাও

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

করোনা মহামারীতে দেশ যখন স্থবির আর লকডাউনের নামে কর্মস্থলে তালা। জীবিকা হারিয়ে ঘরবন্দি লোকজন যখন দিশেহারা ঠিক সে সময় কিছু তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিকল্প আয়ের মাধ্যমে। তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়েছেন। একেকজন সময়ের ব্যবধানে হয়েছেন উদ্যোক্তা। এ কাজে নারী উদ্যোক্তারাও যুক্ত হয়েছেন অনায়াসে। তারা অনলাইন প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই গড়ে তুলেছেন সফল কর্মস্থল। সারাদেশের মতো এমন চিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে। এ উপজেলার হাজারো তরুণ ই-কমার্সে যুক্ত হয়ে এখন সাবলম্বী।
সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চ থেকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। সম্প্রতি টিকাদান কর্মসূচি চলমান থাকলেও এখনো খোলেনি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুরুতে টানা ৪ মাসেরও বেশি সময় কল-কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। এতে কম বেশি সব খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট ও মাঝারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে তরুণদের মাঝে যারা অনলাইনকে কাজে লাগাতে পেরেছেন তারা টিকে ছিলেন। তাদের অনেকেই সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।
তাদের একজন কাজলীনি বুটিক ও হস্তশিল্প কারখানার স্বত্বাধিকারী কাজল রেখা। পেশায় ছিলেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক। করোনাকালে তিনি হয়ে পড়েন বেকার। তার বাসার ভাড়াটিয়ারাও বেকার হয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ে তাদের। তাই কাজল রেখা অনলাইনের আশ্রয় নিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেজ খুলে নিজের হাতে গড়া কিছু পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। এতে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এভাবে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তার কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। প্রথমে বাড়ির ভাড়াটিয়া গৃহবধূদের এ কাজে যুক্ত করেন। তারা বুটিক কাজ, কুশিকাটা, হাতের তৈরি দেশীয় পিঠা, রকমারি দই, মিষ্টি ইত্যাদি নানা পণ্য তৈরি করে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু করেন। এভাবে তার পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি বিদেশেও পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তা কাজল রেখার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, কথাটির বাস্তবতা বুঝেছি। অনলাইনে এমন শত শত নারীরা ঘরে বসে আয় করছেন। যারা গৃহস্থলী সাধারণ পণ্য তৈরি করতে সক্ষম তারা বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে বাড়তি আয় করতে পারছেন। সততার সঙ্গে কাজ করলে এখানে সফলতা পাওয়া সহজ।
অপর উদ্যোক্তা মর্ত্তুজাবাদ গ্রামের ইয়াসিন রায়হান। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এশিয়ান নামে প্রতিষ্ঠান খুলে কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায় তার প্রশিক্ষণ সেন্টারটি। বাধ্য হয়েই অনলাইনে ই-কমার্সে ঝুঁকে পড়েন তিনি। এতোদিন নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রূপগঞ্জের হাজারো লোককে শিখিয়েছন কম্পিউটার। আর ওই শিক্ষার্থীদেরসহ অনলাইনে বিচরণকারী তরুণদের যুক্ত করেছেন তার অনলাইন ব্যবসায়। তিনি দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন খাদ্য পণ্য, মসলা, দেশীয় ঐতিহ্যবাহী রসনা যোগানের কাজ করছেন। এসব ফেসবুক পেজ, ওয়েব সাইট, সফটওয়ারসহ নানাভাবে বিক্রি করে হয়ে ওঠেছেন উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠানে এখন ২০ জনের অধিক কাজ করছেন বিভিন্ন বিভাগে। ইয়াসিন রায়হান বলেন, সময় ও কৌশলকে কাজে লাগালে কেউ বেকার থাকতে পারে না। তরুণদের সামনে বৈশ্বিক তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক স্বাদ নিতে হবে। ডিজিটাল ছোঁয়া যে জাতির আশির্বাদ তা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অপর উদ্যোক্তা উপজেলার কাঞ্চন পৌর এলাকার নলপাথরের বাসিন্দা দিগন্ত হাসান রুবেল। তিনি থ্রি টপার আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ১১ হাজারের অধিক লোককে এ প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বাড়তি আয়ের আশায় কাতারেও গিয়েছিলেন। করোনার সময় তিনি দেশে ফিরে আসেন। এসেই শুরু করেন ই-কমার্স বিজনেস। তারা ওয়েবসাইট তৈরি, বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির হয়ে ফ্রিল্যান্সার হয়ে কাজ করে তাদের প্রতিজন গড়ে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকা মাসিক আয় করছেন। এ বিষয়ে কথা হয় দিগন্ত হাসান রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগ তাই সবার হাতেই এখন একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন থাকে। বহু তরুণ অনর্থক সময় কাটায়। নানা গেইমে আসক্ত হয়ে যায়। অনেকেই জুয়ায় মত্ত হয়। এসব থেকে দূরে রেখে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ওইসব তরুণরাও যে কেউ হতে পারে ই-কমার্সের ফ্রিল্যান্সার। হতে পারে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
কথা হয় মুড়াপাড়ার তরুণ উদ্যোক্তা রুহুল আমীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তরুণরা বিপথগামী হয় অভিভাবকদের বেখেয়ালীপনায়। হাতের মুঠোয় বা ঘরে থাকা ল্যাপটপকে তরুণদের অনেকেই বিনোদন হিসেবে দেখে। পর্ণসাইডে প্রবেশ করে নীতি-নৈতিকতা হারায়। যা আদৌ ঠিক নয়। এসব তথ্য যন্ত্রকে সঠিক কাজে ব্যবহার করলে ঘরে বসে আয় করা সম্ভব। তাই প্রশিক্ষণ নেয়া জরুরি।
স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব আলম প্রিয় বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা। তাদের বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে। ফলে অনেক উদ্যোক্তাই তাদের পুঁজি হারিয়েছেন। যদিও অর্থনীতির বড় অংশজুড়ে রয়েছে এসএমই’র অবদান। তবু সময়ের সঙ্গে তাল না মেলাতে পেরে অনলাইন নারী উদ্যোক্তাদের ২৪ শতাংশ ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা দাবি, স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যবসা করতেন তারা এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিষয়ক নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। তাই ঘরোয়া শিল্প বাঁচাতে সরকারের এ দিকে দৃষ্টিপাত জরুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন