রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চিলমারীতে ঘর বাণিজ্য

সহায় সম্বল বিক্রি করে দিশেহারা দরিদ্রমানুষ

চিলমারী(কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৩৯ পিএম

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রাণীগঞ্জ দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার বিরুদ্ধে ঘর দেয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের হতদরিদ্র,গরীব ও অসহায়দের বিনা মূল্যে ঘর দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়ার দীর্ঘদিন পরেও ঘর কিংবা অর্থ ফেরৎ পাননি তারা। বিনামূল্যে ঘর দেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে সামান্য কিছু ইট,বালি,কংক্রিটের খুটি কিংবা সিমেন্ট দিয়ে ঘর নির্মান কাজ শুরু করলেও ওই ঘরগুলি দীর্ঘ ৬মাস পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়েছে।

জানাগেছে,উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত রাণীগঞ্জ দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে হতদরিদ্র,গরীব ও অসহায়দের বিনামূল্যে ঘর দেয়া হবে মর্মে ওই সংস্থার সভানেত্রী হাসনা বানু ও তার স্বামী আমিনুল ইসলাম তাদের তালিকাভূক্ত প্রায় ২শ সদস্য বাছাই করে। বিভিন্ন সময়ে সদস্যদের মাঝে সামান্য রিলিফ ওয়ার্ক সম্পন্ন করে তাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করে। পরে তাদের ডেকে বিনামূল্যে ঘর দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে নেয়। প্রাথমিক অবস্থায় সামান্য কিছু টাকা নিয়ে ১-২হাজার ইট,বালু কিংবা খুটি কিনে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয় এবং পরে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে নেয় তারা। চড়াবাড়ি এলাকার মৃত অহিজল হকের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ২০হাত ঘর পাইয়ে দিতে আমার কাছে ৫০হাজার টাকা দাবী করে। এসময় তিনি ১টি ভরট (গর্ভবতী) গাভীসহ ৩টি গরু বিক্রি করে তার হাত দিয়ে ৬০হাজার টাকা দিয়েছেন এবং তার ছেলে ২০টাকা দিয়েছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন,তার বাড়ীর থাকার ঘর ভেঙে দিয়ে ৬মাস আগে ৫০হাজার টাকা নিয়ে ঘরের কাজ শুরু করেছিল। পরে আরও ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ঘরের মাত্র২-আড়াই ফুট গেথে রেখেছে,এখন কাজও করে না টাকাও দেয় না। ফলে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একই এলাকার বুলবুল মিয়ার স্ত্রী সামিনা বেগম জানান,বাপের বাড়ী থাকি টাকা আনি দিছং এলায় মোর সংসার হয় না। আমিনুল ইসলামের প্রলোভনে পড়ে তিনি বাবার বাড়ী থেকে ৫০হাজার টাকা নিয়ে আমিনুলকে দিয়েছিলেন। টাকা পেয়ে ১গাড়ী বালু ও ৫টি খুটি এনে তার বাড়ীতে পৌছে দেয়ার প্রায় ৪মাস হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৭মাসেও টাকা কিংবা ঘর পাননি তিনি। কয়ারপাড় এলাকার মহিজল হকের স্ত্রী সবেদা বেগম বলেন,মহিলা উন্নয়ন সংস্থার সভানেত্রীর স্বামী আমিনুল ইসলাম রিলিফ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য তৈরী করেছিল। পরে ২০হাত ঘর পাইয়ে দিতে তার নিকট ৫০হাজার টাকা দাবী করেন আমিনুল। নিজের পালিত ছাগলসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে তিনি ঘর পেতে আমিনুলের হাতে ৫০হাজার টাকা প্রদান করেছেন। বিনিময়ে ১৯টি খুটি, ৫টি সিমেন্টের বস্তা, ৬টি রিং ও ১টি টিউবওয়েল দিয়েছে। গত প্রায় ১০মাস থেকে আর কোন খোজ-খবর নেই। একই রকম অভিযোগ মৃত বেলাল উদ্দিনের স্ত্রী ছবিয়া বেওয়া, সহিদার রহমানের স্ত্রী সুমি বেগম,মর্জিনা বেগম,ইয়াছিন আলী, আলোমতি,মোরশেদা বেগম,এলমাস ও আমিনুলসহ আরও অনেকের। তারা আমিনুর ইসলামের কাছ থেকে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরৎ পেতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এব্যাপারে মুঠোফোনে রাণীগঞ্জ দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার সভানেত্রীর স্বামী আমিনুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি সদস্যদের নিকট থেকে অর্থ আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন,আমি হতদরিদ্র,গরীব ও অসহায়দের বিনামূল্যে ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করছি। ওই এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেছেন মর্মেও জানান তিনি। কতজনকে তিনি ঘর দিতে চেয়েছেন সে সংখ্যা তিনি বলতে নারাজ। রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, রানীগঞ্জ দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন সংস্থা এলাকার ২৫-৩০জন গরীব ও অসহায়কে বিনামূল্যে ঘর দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে শেয়ার করেছি। ঘর নিয়ে বাণিজ্যের প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডবিøউ এম রায়হান শাহ বলেন, অর্থ আত্ম,সাতের অভিযোগ আসলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন