সোহাগ খান : রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, বুধবার লবণ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২৫-৩৫ টাকায়। পরদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫-৩৮ টাকায়। আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম দু’দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে। এক বছর আগে আয়োডিনযুক্ত লবণ বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ১৫-২৮ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা বা ৪৬.৫১ শতাংশ।
কক্সবাজার লবণ মিল মালিকদের সাথে ফোনে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও তারা আয়োডিনযুক্ত প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি করেছিলেন প্রতি কেজি ১৫ টাকায়। বর্তমানে তা ১৮-২০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। অথচ একই লবণ বড় বড় কোম্পানি কেজিপ্রতি ৩৮ টাকায় বিক্রি করছে।
লবণ ব্যবসায়ীরা জানান, লবণের বাজারে কোনো ধরনের সঙ্কট ছাড়াই আয়োডিনযুক্ত প্যাকেটজাত লবণের দাম কেজিপ্রতি ৩ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। দেশে পণ্যটির সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান লবণচাষিরা। তবে যাচাই করে দেখা গেছে বাজারে লবণের কোনো সঙ্কট নেই।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছর লবণ উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে খাওয়ার লবণ আট লাখ ও শিল্পে ব্যবহারের জন্য আট লাখ টন। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ওই সময় খাওয়ার লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে দেশে নতুন মৌসুমের লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। দেশে যে পরিমাণ লবণ মজুদ রয়েছে, তাতে সঙ্কট দেখা দেয়ার কোনো কারণ নেই। সেই সঙ্গে আমদানিকৃত লবণ ভোজ্য নাকি শিল্পে ব্যবহার হবে, তা নিয়েও মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
বিসিকের এক কর্মকর্তা জানান, দুই মাসের মধ্যে বাজারে নতুন মৌসুমের লবণ সরবরাহ শুরু হবে। সরকার যে পরিমাণ লবণ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে, তা দেশে পৌঁছতে আরো সময় লাগবে। এ সময়ের মধ্যে পণ্যটি আমদানির যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা কতটুকু যৌক্তিক বোঝা মুশকিল। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী হিসাব কষে সঙ্কট দেখিয়ে লবণ আমদানি করছেন। এ আমদানির ক্ষেত্রেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মুন্সী সফিউল হক বলেন, দেশে লবণের হিসাবটি মূলত বিসিক দেখে থাকে। বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রায় দুই লাখ টন লবণের ঘাটতি আছে। এ কারণে দেড় লাখ টন লবণের আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওই লবণ দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।
কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, সরকার দেড় লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ দেশী লবণ গুণে ও মানে অনেক ভালো। আমদানিকৃত লবণ অর্ধেক শিল্পে ও অর্ধেক ভোজ্য হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরের দিকে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় বলা হয়, লবণ উৎপাদনে আয়োডিন মেশানো, প্যাকেজিং ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসাব করলে এক কেজির দর ৮ টাকার বেশি হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অথচ বাজারে বর্তমানে আয়োডিনযুক্ত লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫-৩৮ টাকায়, যা দু’দিন আগেও ছিল ২৫-৩৫ টাকা। এতে একদিকে কৃষক লবণ উৎপাদন করে ঠকছেন, অন্যদিকে ভোক্তাকে অতিরিক্ত দামে তা কিনতে হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন