শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সেনাপ্রধানকে হেয় করা মানে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা

সাংবাদিকদের সেনাপ্রধান

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪২ এএম

সেনাপ্রধানকে হেয় প্রতিপন্ন করা মানে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করা বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের এভিয়েশন অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।

আজিজ আহমেদ আরো বলেন, আইএসপিআরের মাধ্যমে যে রিজয়েন্ডার দেয়া হয়েছে, সেটা হলো সেনাবাহিনীর বক্তব্য। ইতোমধ্যে আমি নিশ্চিত আপনারাও জানেন যে, যে ধরনের অপচেষ্টাগুলো হচ্ছে, এগুলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো একটা প্রতিষ্ঠান, যেটা জাতীর গর্ব, দেশের গর্ব, সেই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে তারা নানান ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। যাতে করে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী একটা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত ও ওয়েল-মোটিভেটেড ফোর্স। আগের থেকে অনেক বেশি সুসংহত। সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড অত্যন্ত ইফেকটিভ। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ঘৃনাভরে এ ধরনের অপচেষ্টাকে প্র্রত্যাখ্যান করেছে অতীতে, এখনো করছে এবং বর্তমানে যা আছে, তাকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে এবং আমাদের চেইন অব কমান্ডে যারা আছে, এ ব্যাপারে সবাই আমরা সতর্ক আছি। তিনি বলেন, আমি আশ্বাস দিতে চাই আপনাদেরকে, সেনাবাহিনীতে এই ধরনের অপপ্রচার বিন্দুমাত্র আঁচ আনতে পারবে না তারা আমাদের চেইন অব কমান্ডে। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত এবং বাংলাদেশ সরকারের, বর্তমান সরকারের যেকোনো আদেশ-নির্দেশ পালনে সদা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশের সেটা অভ্যন্তরীণ হোক বহির্বিশ্বের হোক, যেকোনো সমস্যার মোকাবিলার জন্য আমরা সাংবিধানিকভাবে শপথবদ্ধ।

আল জাজিরার প্রতিবেদনটি সেনাপ্রধানের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করার এবং সেনাপ্রধানের ভিডিও ফুটেজ দেখানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো, আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কথাটা বলা হয়েছে, আমি আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাজা আছে, কিন্তু, আপনি যদি গতকাল সে সাজা থেকে অব্যাহতি পেয়ে থাকেন, আপনার বিরুদ্ধে যদি আর কোনো মামলা চলমান না থাকে, আপনাকে কি ফিউজিটিভ বলা যাবে আজকে? আপনাকে কি বলা যাবে যে, আপনি সাজাপ্রাপ্ত? কারণ, যখন আপনি অব্যাহতি পেয়ে যান কোনো একটা চার্জ থেকে, তারপরের দিন থেকে আপনি যেকোনো মুক্ত একজন নাগরিকের মতো। আমার ভাইদের সম্পর্কে যে অপপ্রচারগুলো এসেছে, সেটার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া আছে। খুব শিগগিরই আমার পরিবারের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদেরকে সব জানানো হবে। তবে, এতটুকু আমি আপনাদেরকে বলতে পারি, সেনাপ্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি, আমার অবস্থান, আমার দায়িত্ব সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ সচেতন। কী করলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে, কী করলে সেনাবাহিনীতে আমার যে দায়িত্ববোধ, আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা খর্ব হতে পারে, আমি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।

তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে যখন মালয়েশিয়াতে দেখা করেছি, তখন তার নামে কোনো মামলা ছিল না। যে একটা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ছিল, সেটা অলরেডি অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। সেই অব্যাহতি মার্চ মাসে হয়েছিল। আমি এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম। এখানে আল জাজিরা যে স্টেটমেন্টটা দিয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছে। কারণ সেদিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে, আমি যদি বলি, সেদিন না কোনো সাজা ছিল, না তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল। তার আগেই যে মামলাটা ছিল, সেটা থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, যে জিনিসটা হলো যে, বিভিন্ন সময়, আপনি যেটা বললেন যে, বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় আমার যে চিত্র ধারণ করা হয়েছে, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে মনে করি, যখন আমি অফিসিয়াল ক্যাপাসিটিতে কোথাও থাকব, তখন আমার নিরাপত্তা সেটা হলো অফিসিয়ালি নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। আমি খোনেই যাই, সেটা হুস কান্ট্রি করে থাকে। সেখানে আমার অতিরিক্ত কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কিন্তু, যখন আমি কোথাও আমার ব্যক্তিগত সফরে থাকি, হয়তো আসার সময় ট্রানজিটে কোনো আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাই, সেসময় অফিসিয়াল কোনো প্রোটোকল আমার ব্যবহার করা, আমি সেটা সমীচীন মনে করি না। আমি মনে করি সেটা অপচয় এবং সেটা আমার উচিত নয়। সেক্ষেত্রে সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি কিছু করে থাকে, তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে, সেটা আপনারা তো এখন ভালো করেই জানেন এবং আমাদের রিজয়েন্ডার পাওয়ার পরে আপনারা বুঝতে পারছেন, যারা এ কাজগুলো করেছে, কেন করেছে, তাদের উদ্দেশ্যটা কী হতে পারে বলেন তিনি।

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ আরো বলেন, আপনারা প্রশ্ন করেছেন, বারবার কেন আমাকে টার্গেট করা হয়। আমার মনে হয় সেটার দায়িত্ব আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। আপনারাই বুঝে নেন, খুঁজে নেন, কেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ, এই সেনাপ্রধানকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। সেনাপ্রধানকে হেয় প্রতিপন্ন করা মানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আপনাদেরকে এই জিনিসটা বুঝতে হবে। আমি সম্পূর্ণভাবে সচেতন যে, আমার কারণে যদি কখনো আমার ইনস্টিটিউশন, অরগানাইজেশন যেটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আমাদের সরকার যাতে কোনোভাবে বিব্রত না হয়, বিতর্কিত না হয়, আমি সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। যা কিছু আপনারা শুনছেন, এগুলোর কোনো প্রমাণ, এগুলো হয়তো বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা কাট-পিস অন্যান্য জিনিস সন্নিবেশিত করে তারা এগুলো করতেই পারে। কিন্তু, তাদের এই উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। এবং সেটা আপনারা আপনাদের কলমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে তাদেরকে জবাব দিয়েছেন এবং সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

আল জাজিরার প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশের যারা যুক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেটা হয়তো যে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেে তেমন কিছু করার হয়তো থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে। আমি নিশ্চিত সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থা যারা আছে, তারা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মাজহারুল ইসলাম ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৫৫ এএম says : 1
ঠিক বলেছেন
Total Reply(0)
Moin Uddin Siddiqui ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:২০ এএম says : 0
দেশের জনগন অনেক সচেতন এবং সবি বুঝে।
Total Reply(0)
Md Jalal ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:২২ এএম says : 0
সত্যটা বলার জন্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Sharif Sultan ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:২৩ এএম says : 0
এত জটিল জিনিস এত সহজে বুঝাইয়া দেবার জন্য ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
এম.এস. ইসলাম কামরুল ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:২৪ এএম says : 0
দিনশেষে ভাল থাকুক প্রিয় স্বদেশ!
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:০০ এএম says : 0
আমাদের সেনাবাহিনীকে আমরা আমাদের গর্বের জায়গায় দেখতে পছন্দ করি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন