চলতি শুস্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে আবারও নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দূরদূরান্ত হতে আসা এসব পণ্যবাহী জাহাজ নৌবন্দরে ভিড়তে না পারছে না। ফলে নৌবন্দরের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। অন্যদিকে, এসব নৌযান হতে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযানগুলো নাব্যতা সঙ্কটের কবলে পড়ে সিএন্ডবি ঘাটের বন্দরে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে এই দুরাবস্থা চরমে পৌছেছে। বর্তমানে নাব্যতা সঙ্কট রক্ষায় কয়েকটি স্থানে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ করছে। তবে খননের কয়েকদিনের মধ্যেই আবার বালু এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে।
চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ বিভিন্নস্থান হতে নৌপথে এই বন্দরে পণ্য আনা নেয়া করা হয়। ফরিদপুরের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট এই বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বহিঃবিশ্বে রফতানি হয়। এছাড়া সিলেট থেকে কয়লা ও বালু, ভারতের গরু ও চালসহ চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মিরকাদিম থেকে এই নৌপথেই চাল আমদানি হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে প্রচুর সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এই বন্দর হতে খালাস করা হয়। কিন্তু বর্তমানে নাব্যতা না থাকায় এবং অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় এসব পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌবন্দরে ভিড়তে না পেরে অনেক দূরে দির্ঘীর চর, ভূঁইয়াবাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, বাইল্যা হাটা, হাজিগঞ্জের চর, চরভদ্রাসনের এমপিডাঙ্গি ও গোপালপুরসহ বিভিন্নস্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভেড়ানো রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট হতে এমন একটি সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো. দুলাল হাওলাদার বলেন, চরভদ্রাসনে এসে ঠেকে গেছি। আমার জাহাজে ১২ হাজার বস্তা সিমেন্ট আটে। কিন্তু পর্যাপ্ত গভীরতা নেই নেই বলে ৮ হাজার আনতে হয়েছে। তিনি বলেন, এতে পণ্যের ভাড়াও কমে গেছে আমাদের। নৌবন্দরে ভিড়তে পারলে প্রতি বস্তা হতে ১৪ টাকা পেতাম। কিন্তু এখন এই ভাড়ার অর্ধেক দিয়ে আরেকটি ট্রলার ভাড়া করে মাল খালাস করতে হচ্ছে। এসব কারণে স্টাফ খরচ এবং অন্যান্য ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এছাড়া জানমালের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন।
এমবি ছায়ানীড় নামে আরেকটি জাহাজের মাস্টার মো. ফারুক বলেন, নাব্যতা না থাকায় জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ভেঙে যায়। সুখান আটকে যায়। জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, অন্ততপক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিলো কিন্তু সেখানে কোথাওবা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে। ড্রেজিংয়ের পরেও কেনো নাব্যতা আসছে না এর কারণ জানতে চাইলে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্তরা জানান, ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন বালু এসে ভরে যাচ্ছে। পানিতে প্রচুর পলি রয়েছে।
ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট হতে শুল্ক আদায়কারী বিআইডব্লিউটিএর কর্মচারী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দরে জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভিড়তে না পারায় তাদের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। আগে ঘাটটি ইজারা দেয়া হতো। তবে এখন সরাসরি বিআইডব্লিউটিএ এখানে শুল্ক আদায় করছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্ট পোর্ট অফিসার মাসুদ পারভেজ বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌচ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। তবে এখনও পথটি বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই এই সঙ্কট কেটে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন