শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও উন্নত সেবার জন্য তিনবার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী সদর হাসপাতালটির প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন নেক নজর পড়ছে না। মাত্র ১০ শয্যা থেকে ক্রমান্বয়ে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে, কিন্তু অর্ধশতাব্দীকালেও এর অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি, পরিবর্তন সাধিত হয়নি পুরনো অর্গানোগ্রামের। প্রয়োজনীয় ডাক্তার, ডাক্তারদের এটেনডেন্ট, রোগীদের বিশ্রামের জায়গা, ডেগার্ড, নাইটগার্ড, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের অভাবে হাসপাতালটির স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, পাকিস্তান শাসনামলের ১৯৬২ সালে রুরাল হেলথ সেন্টার নামে ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ বছর পর রুরাল হেলথ সেন্টার থেকে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৬ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালে হাসপাতালটির ক্যাপাসিটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেনি। রুরাল হেলথ সেন্টারের অবকাঠামোর জোড়াতালি দিয়ে কিছু কক্ষ বৃদ্ধি করে ১০০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ডাক্তারদের বসার জায়গা নেই। বাসস্থানের জায়গা নেই। ডাক্তার নার্স ও কর্মচারীদের অতি পুরনো বাসস্থানগুলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে যেখানে ১৭ জন মেডিকেল অফিসার (এমও) থাকার কথা, সেখানে মাত্র ৭ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে।
হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ আমিনুল হক শামীম দিনরাত কাজ করতে করতে তিনি নিজেও মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ৬ বছর ধরে চক্ষু বিশেষজ্ঞ নেই। প্রতিদিন শত শত চক্ষু রোগী চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। পাঁচ বছর ধরে ডেন্টাল সার্জন নেই। নেই রেডিওলজিস্ট। সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন আসেন অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট ডা. মাসুম। তিনি এখানে যোগদান করেই জানিয়ে দিয়েছেন, সপ্তাহের দুদিনের বেশি তিনি আসতে পারবেন না। বিনা কাজে বেতন নিচ্ছেন পুরো মাসের। করোনাকালে কয়েক মাস হাসপাতালে আসেননি গাইনি কনসালটেন্ট তাহমিনা বেগম। তিনিও সপ্তাহে দুই/একদিন আসেন। রোগীদের অভিযোগ, তিনি আন্তরিকভাবে তাদের চিকিৎসা করেন না। গাইনি কনসালট্যান্ট আছেন তার নাম ডা. মাহমুদা। তার পোস্টিং বেলাবো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ডেপুটেশনে এসেছেন সদর হাসপাতালে। সপ্তাহে দু-একদিন আসেন। তিনি রোগী তার আত্মীয়স্বজনদের সাথে প্রায়ই দুর্ব্যবহার করেন। বহিরাগত দালালরা হাসপাতালের রোগীদেরকে ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্লিনিকে।
একইভাবে প্রতিদিন শতশত চক্ষু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসকের অভাবে ফিরে যায়। হাসপাতাল থেকে গেটকিপার নেই। মূলফটক ২৪ ঘণ্টা থাকে খোলা। এই সুযোগে হাসপাতালের ভিতর চোর ও দালালদের অবাধ যাতায়াত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোগীদের মোবাইল টাকা পয়সা চুরি হচ্ছে। হাসপাতালের রোগীদের বিছানা থেকে মোবাইল টাকা-পয়সা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন