সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

করোনার টিকা : ১৪ দিন পর সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৫ পিএম | আপডেট : ৪:১৮ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, করোনার টিকা নেওয়ার কারণে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার ন্যূনতম ১৪ দিন পর থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধসক্ষমতা তৈরি হয়। এ সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই করোনার টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে। বাংলাদেশে এখন করোনার যে টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি কোভিশিল্ড।

দেশে গণটিকাদান শুরু হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৯০৫ জন। আর গতকাল পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন। এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা পাওয়া গেছে ৬৯৬ জনের মধ্যে। কোনো টিকাগ্রহীতার ক্ষেত্রে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগ–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুর দিকে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে লোকজনের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে লোকজনের ভয় কাটছে।

দেশে এই টিকা নেওয়ার পর এ পর্যন্ত তিনজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার সাত থেকে ১৬ দিনের মধ্যে আক্রান্ত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, শরীরে করোনার জীবাণু প্রবেশের পর যদি তাঁরা টিকা নেন, তাহলে সেটা কাজ না–ও করতে পারে। কারণ, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর এর শক্তিকাল ১৫ দিন। তার আগেই তাঁরা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। টিকার বুস্টিং ডোজ বা দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। তবে কারও যদি নানা শারীরিক সমস্যা বা ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল থাকে, তাহলে তিনি আবারও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সে সংখ্যা ১০ হাজারে একজন হতে পারে।

ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে করোনার টিকাগ্রহীতার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর দিকে যেসব জেলায় টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কম ছিল, এখন সেসব জেলাতেও টিকাগ্রহীতাদের চাপ বেড়েছে। সংখ্যার দিক থেকে কম টিকা দেওয়া হয়েছে মেহেরপুর, ঝালকাঠি, শেরপুর, শরীয়তপুর ও বরগুনা—এই পাঁচ জেলায়। স্বাস্থ্য বিভাগ–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকা নিতে লোকজনকে উৎসাহিত করতে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।

বরগুনা জেলায় গতকাল পর্যন্ত করোনার ২৪ হাজার টিকা পৌঁছেছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫২২ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জন হুমায়ূন শাহীন খান বলেন, টিকাকেন্দ্রগুলো একটু দূরে হওয়ায় লোকজন আসেন কম। গ্রামাঞ্চলের লোকজন অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যেতে চান না। তিনি বলেন, টিকা নিতে উৎসাহিত করতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সপ্তাহে এক দিন মাইকিং করা হচ্ছে। মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১ হাজারের বেশি হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতালে একাধিক বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথের দিনে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কোনো হাসপাতালে এক দিনে কতজনের টিকা দেওয়া হবে, সেটি নির্ভর করে বুথের সংখ্যার ওপর।

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল ও চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত শেরপুরে টিকা নিয়েছেন ১০ হাজার ৭৩১ হাজার জন। শেরপুর জেলার সিভিল সার্জন এ কে এম আনওয়ারুর রউফ বলেন, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় করোনার টিকা নিয়ে জনগণের সাড়া কম। বাকি তিন উপজেলায় সাড়া ভালো। ওই দুই উপজেলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনকে টিকা নিতে উৎসাহিত করছে।

শরীয়তপুর জেলায় গতকাল পর্যন্ত ৩৭ হাজার টিকা পৌঁছেছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩৬ জন। শুরুর দিকে টিকাকেন্দ্রের পাশেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে করোনার টিকা নিবন্ধন করা হচ্ছে।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, মানুষের টিকা নেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কম। ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। টিকাকেন্দ্রে এসেও নিবন্ধন করার সুযোগ রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে লোকজনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলার সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন বলেন, জেলায় শুধু কতজন টিকা নিয়েছেন, সেটি বিবেচনায় নিলে হিসাব সঠিক হবে না। জেলায় কত ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে আর সেখান থেকে কত ডোজ দেওয়া হয়েছে, সেটি বিবেচ্য। মেহেরপুরে ১২ হাজার ডোজ টিকা এসেছিল, তার মধ্যে ১০ হাজার ৫৪ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন