বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সাতক্ষীরায় লুটপাট অনিয়মের অভিযোগ

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

মুজিব শতবর্ষে সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর নির্মাণে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। অনেকের হাতে দেয়া হয়েছে ঘরের চাবি ও জমির দলিল।

জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ এর আওতায় সাতক্ষীরায় প্রথম ধাপে ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ১ হাজার ১৪৮ টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ খরচ ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। মোট ঘর নির্মাণ খরচ ১৯ কোটি ৬৩ লাখ ৮ হাজার টাকা। সিডিউল অনুযায়ি দুই কক্ষের প্রতিটি সেমি পাকা ‘ঘরের আয়তন ৩৯৪ বর্গফুট। একটি রান্না ঘর, একটি টয়লেট ও ইউটিলিটি স্পেস। ঘর নির্মাণে প্রথম শ্রেণির উন্নত মানের ইট ও ঢালাইতে পিকেট ইটের খোয়া ব্যবহার করতে হবে। ঘরের ভিত হবে ১০ ইঞ্চি ও দেয়াল হবে পাঁচ ইঞ্চি। ঘরের মেঝে ঢালাইতে একটা সিমেন্ট, তিনটা বালি ও ছয়টি খোয়া মিশ্রিত। দেয়াল গাথুনিতে একটা সিমেন্ট, ৬টি বালি দিতে হবে। পাঁচ ইঞ্চি চওড়া ও ৬ ইঞ্চি লিংটন তৈরিতে ৪ টি ১০ মিলি ও ৪টি ৮ মিলি রড ব্যবহারের খাঁচা করতে হবে। এটি ঢালাই করার সময় উন্নত মানের সাদা বালি ও লাল বালি মিশিয়ে ১.৮ এফ এম করতে হবে। এখানে উন্নত মানের ইটের খোয়া ৪ টি, ২ টি বালি ও ১ টি সিমেন্ট মিশিয়ে ঢালাই করতে হবে। প্রতিটি ঘরের ৫ টি জানালায় খাঁচা তেরি ঢালাই করতে হবে। জানালার গ্রিল সাইডে ফ্লাড হবে এক ইঞ্চি পুরু। জানালার গ্রিল হবে ১০ মিলি পুরু। ২২ গেজির টিন দিতে হবে। দরজার ফ্রেম হবে দেড় ইঞ্চি। ১৮ গেজির সিড দিয়ে দরজা করতে হবে। টয়লেটের দরজা হবে বাথরুমে। ৬ টি রি্এর টয়লেটে উন্নত মানের স্লাপ থাকবে। ঘর তৈরি শেষে রং করাসহ প্রতিটি ঘর নির্মাণে রয়েছে নানাবিধ নির্দেশনা। কিন্তু এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না।
সরেজমিনে সদর উপজেলার গাভা, কলারোয়া উপজেলার দরবাসা, ফাজিলকাটি, পুটুনি গ্রামের বিভিন্ন স্থান ঘুরে জানা গেছে, গৃহ নির্মাণে নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালি ব্যবহার করা হচ্ছে।
লিংটন ও জানালায় খাঁচা ছাড়াই ঢালাই হচ্ছে শুধুমাত্র সাদা বালি ও সিমেন্ট দিয়ে। এখানে লাল বালির মিশ্রনে এফ এম দৃশ্যমান শূন্য। এছাড়া, মেঝে ঢালাইয়ে নিয়ম অনুযায়ি সিমেন্ট বালির কোনো পরিমাপ নেই। ১ টা সিমেন্টের সাথে ইচ্ছে মতো মেশানো হচ্ছে বালি, ব্যবহার করা হচ্ছে অতি নিম্নমানের ইটের খোয়া। ঘরের মেঝে পানি দিয়ে আটকে রাখার কোনো কার্যক্রমও নেই। দরজা, জানালা, চাল, টিনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কম খরচে দ্রুত ঘর নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। লুটপাট করা হচ্ছে সরকারি অর্থ।
অপর একটি সূত্রে আরো জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের কথা বলে কলারোয়াসহ জেলার বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার ইট ফ্রিতে নিয়েছেন ঘর নির্মাণের জন্য। অনেক ভাটা মালিক ইট দিতে না পারায় তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘর নির্মাণে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিক ও এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই প্রতিনিধিকে জানান, তাদের চোখে এটি পুকুর চুরি। এমন অনিয়ম দুর্নীতি তাদের বয়সে আর কখনো দেখেননি। তারা বলেন, নামমাত্র ঠিকাদার দিয়ে এসব কাজ করানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ঠিকাদারের বিল তৈরি করে দিয়ে টাকার ভাগ বসান। পিআইও এবং ইউএনও এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল এই দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত। মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভ‚মিহীনদের ঘর নির্মাণে এমন অনিয়ম লুটপাটের বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে “ আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার ” শ্লোগান নিয়ে দেশের ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নীতিমালা ২০২০ বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে গৃহ নির্মাণ কাজ সুষ্ঠভাবে মনিটরিং করার জন্য আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রধান হলেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস, এম মোস্তফা কামাল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই প্রথম গৃহ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ শুনলাম। এটি সঠিক নয়। গাভা বা অন্য কোথাও কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়িই ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে, কলারোয়া উপজেলাতে ঘর নির্মাণে কিছু অনিয়মের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য এডিসি জেনারেলকে দায়িত্ব দিয়েছি। আর ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে যদি কেউ ইট বা টাকা নিয়ে থাকে তাহলে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন