শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

লাইসেন্সহীন শতশত ইটভাটা

দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় ২৪৫ ভাটা

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

পরিবেশের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেই। তবুুও ব্যাঙের ছাতার মত শত শত ইট ভাটা চলছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে কেবল একটি ইউনিয়নেই রয়েছে ২৮টি ভাটা। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর পার্বতীপুর ও বিরল উপজেলার অধিকাংশ এলাকাতে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ইট পোড়ানোর গন্ধ, কালো ধোয়া ও চিমনি থেকে নির্গত ছাই থেকে বাঁচতে চোখ নাক ঢেকে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ভাটার দূষিত ধোয়া ও ছাইয়ের কারণে একরের পর একর আম বাগানসহ ক্ষেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে। বাগান ও জমির মালিকেরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। এদিকে পরিবেশ ও প্রশাসনের ছাড়পত্র বাবদ লাখ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে দিতে হচ্ছে না। ভ্যাট বাবদ ভাটাগুলোর কাছে বকেয়া পড়েছে কয়েক কোটি টাকা।
তবে ভাটা মালিকদের কথা আমরা সমিতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা দিচ্ছি। এই টাকা কোথায় কি এবং কিভাবে ব্যয় হচ্ছে তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। অবশ্য লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র না থাকলেও কার্যত অবৈধ এসব ভাটার বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। পরিবেশ অধিদফতর মাঝে মাঝে হাতে গোনা কয়েকটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটা ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি জরিমানা করছে। কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই আবার সেসব ভাটা চালু হচ্ছে এবং চলছে।
দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলায় ২৪৫টি ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫টি ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। গত দু’বছর আগে ভ‚য়া রিটের ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৩০ ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরো দুটি রিটের ৪০ ভাটা মালিক রয়েছে এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে। এসব ভাটাও কোন বাধা ছাড়াই চলছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে একরের পর একর আম বাগানে কোন ফল আসছে না। সারি সারি ভাবে দাড়িয়ে থাকা আম গাছগুলির পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে।
গাছের পাতা ও ক্ষেতের ফসল ভাটা থেকে নির্গত ছাই দিয়ে ঢেকে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হলে কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটি আশপাশের বায়ুমন্ডলে থাকা কার্বন মনো অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের কারণেই ফসলের ক্ষতি হচ্ছে মর্মে রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে বাগানের আশেপাশে কয়েকটি ভাটার নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ভাটাগুলোতে প্রকাশ্যেই প্লাস্টিকের বোতল ও টায়ারসহ বিভিন্ন পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দিনাজপুর পরিবেশ অধিদফতরের সিনিয়র কেমিস্ট এ কে এম ছামিউল আলম কুরছি জানান, পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ ও জরিমানা করা হচ্ছে। পরিবেশের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকা সত্তে¡ও ভাটাগুলো চলার ব্যাপারে ৯নং হামিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকাকেই দায়ী করছেন। প্রশাসনের নাকের ডোগায় ভাটাগুলো চালু থাকায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তদারকি কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই চলছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা নিজেদের ক্ষতি হলেও ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।
উল্লেখ্য যে, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এমনকি ভাটায় আগুন দেয়ার জন্যও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন