কিছুদিন আগে দেশের টিলা রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মলাংগি টিলা কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন আমাতুল করিম। পরে আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদি সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে এ রিট করেন মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী এবং একলাছ উদ্দিন ভুইয়া। রুলে মন্ত্রি পরিষদ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, পরিবেশ, সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। শুনানিতে মনজিল মোরশেদ বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। ওই আইনের ১৫ ধারা অনুসারে কেউ টিলা কর্তন করলে তার দুই বছর পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে জানা যায়, প্রশাসনের নাকের ডগায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে মলাংগি টিলার একটি বড় অংশ কেটে রাস্তা নির্মাণ ও মাটি বিক্রি করলেও আইনানুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুনানি শেষে তিনি জানান, সারাদেশের টিলা রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। টিলা সঠিকভাবে সংরক্ষণ, কেউ টিলা কাটলে তার বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ১৫ ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন কোনো এলাকায় টিলা কাটা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি কর্মকর্তাকে দায়ী করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত মলাংগি টিলা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সারা দেশের টিলা রক্ষায় মনিটরিংয়ের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য কেবিনেট ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পরিপত্র জারির জন্য নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। টিলা বা পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর খবর নতুন নয়-প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে মর্মান্তিক এসব ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে-ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত। প্রাণহানি ছাড়াও ঘর বাড়ীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রতিবছরই ঘটে। চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য জেলাগুলো, সিলেট, কুমিল্লা, গাজীপুর, বগুড়াসহ সারাদেশেই নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল উজাড় এবং পানির উত্তোলন প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে তাতে প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে পাহাড়-টিলায় ধস নেমে আসাটা অস্বাভাবিক নয়।
বাংলাদেশে খুব উচুঁ পাহাড় নেই। আমাদের দেশে পাহাড় বলতে আমরা যা বুঝি, তা মাটির উচ্চ টিলা মাত্র। টিলাই হোক আর পাহাড়ই হোক; এই সুউচ্চ ভূমি বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। এসব পাহাড় মাটির পাহাড়। এগুলোতে প্রচুর গাছ, বৃক্ষ, তরু-লতা প্রকৃতির অকৃপণ আর্শীবাদে বেড়ে উঠে। এসব পাহাড় বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখীর অবাধ বিচরণ স্থল। এসব পাহাড়ের মধ্যে সৃষ্ট বহু প্রাকৃতিক হ্রদ পার্শ্বস্থ এলাকায় সারা বছর পানির যোগান দেয় এবং নানাভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে। ১৯৮০-৮১ সাল থেকে ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটা শুরু হয়। এরপর পাহাড় কাটা বন্ধ করে আইন পাশ হয়। কিন্তু পাহাড় কাটা কার্যত বন্ধ হয় না। সিলেট, চট্টগ্রাম বা অন্যান্য স্থানে পাহাড়-টিলা কাটার অন্যান্য অশুভ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে মহানগরীর নালা-নর্দমা তথা পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এদিকে সিলেট অঞ্চলের সুরমা বা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে প্রতি বছর পলি জমে জমে নদী গর্ভ ভরাট হয়ে চলেছে। শহরে কোন স্থান ভরাট করার প্রয়োজন হলে ঐ সব স্থান থেকে মাটি তুলে এনে সহজে ভরাট করা যায়। কিন্তু তা না করে পাহাড় কেটে ঐ সব জায়গা ভরাট করে সমূহ সর্বনাশ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক সরকারের আমলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এবং কিছু কিছু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, সমন্বয় কমিটির নামে কিছু কিছু বিবৃতিও প্রকাশিত হয়। কিন্তু এগুলো ¯্রফে কথার কথায় পর্যবসিত হয়। চট্টগ্রাম বা সিলেট শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের সংবাদ আমরা পত্র-পত্রিকায় পাঠ করে থাকি। সিলেট বা চট্টগ্রাম মহানগরীর উচ্চ পাহাড়গুলো নিধনের ফলে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও মাত্রায় ইতোমধ্যে হেরফের হয়ে গেছে। ১৯৮০-৮১ সালের পূর্বেকার গড় বৃষ্টিপাতের সাথে বর্তমানের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনা করলে এ তফাত পরিষ্কার হয়ে উঠবে। এভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। নদী-নালা হতে মাটি এনে প্রয়োজনীয় ভরাট কাজ চালানো যায় এবং এটা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গড়ে তোলা সম্ভব। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিলেট, কক্সবাজার, বান্দরবন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা অভিমত প্রদান করে সরকার ও জনগণকে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে সাহায্য করতে পারেন। পাহাড় কেটে মাটি ভরাটের উপকারিতা নেই বললেই চলে। উপকারীতার মধ্যে যেটুকু লক্ষ্যণীয়, তা হচ্ছে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষীর পকেট ভরা হচ্ছে। অথচ এর বিপরীতক্রমে কোটি কোটি মানুষের বাসোপযোগী পরিবেশ নষ্ট হয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, প্রচলিত আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনপূর্বক একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত ও অর্থলোভীর কারণে সিলেট, চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশে-পাশের পাহাড়গুলো এখন সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, আত্মঘাতী এই নাশকতামূলক কাজ সম্পর্কে অগণিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বহু চিঠিপত্র লিখেছেন দায়িত্বশীল সচেতন নাগরিকরা। কিন্তু আত্মঘাতী এই দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং দুর্বৃত্তরা বহাল তবিয়তে পাহাড় নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় যে, চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী, পাহাড়তলী, খুলশীতে পাহাড় বলতে গেলে এখন নিশ্চিহ্ন। হাটহাজারী ও সীতাকুন্ড থানায় বহু পাহাড়ের অস্তিত্ব এখন বিলীন হতে চলেছে। কর্ণফুলীর অপর পাড়ে সুদৃশ্য পাহাড় শ্রেণীও বিলুপ্তির পথে। সিলেটেও একই অবস্থা। সিলেট নগরীর চারপাশের সুদৃশ্য পাহাড় বা টিলা এখন আর প্রায় নেইই। পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। আইনের তোয়াক্কা কেউ করে না। দিন-দুপুরে, রাত-দুপুরে সুবিধা মতো সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত দল পাহাড় কেটে চলেছে। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত খবরাদিতে প্রকাশ, পাহাড় কাটার জন্য এক শ্রেণীর সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে রকমারী ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে। এরা বিভিন্ন রিয়াল এস্টেট ও কলকারখানার জন্য ক্রীত জমিতে মাটি সরবরাহের চুক্তিবদ্ধ হয়। এ কাজে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়। প্রকাশিত খবরসমূহে এ অভিযোগও করা হয়েছে যে, মাটি সরবরাহকারী এসব সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে নিয়োজিতদের একাংশ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পরিমাণ নজরানা প্রদান করে তাদের কর্ম সম্পাদন করে। খবরে আরো প্রকাশ, এসব সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট বিশেষ রাজনৈতিক দলীয় ক্যাডারদের মদদ পায়। পাহাড় প্রভৃতি শ্রেণীর জমির মালিক সরকার। সরকার বিভিন্ন ব্যক্তিকে পাহাড় ইজারা দেয়। কোন কোন ইজারার দেয়া ৯৯ বছর। এভাবে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ফলে পাহাড় নিধনকর্ম অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। দলীয় ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার এক শ্রেণীর সদস্যের অশুভ যৌথ ব্যবস্থাপনায় পাহাড় নিধন চলতে থাকার কারণেই তা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ-পাহাড়-পর্বত-নদী-সাগরময় ভূ-প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন এমন একটা ভারসাম্য সহকারে যে এর কোন রকম ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম ঘটালে তা শুধু প্রকৃতিতে নয় গোটা পরিবেশেই সৃষ্টি করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। গঙ্গা নদীর যে স্রোতধারা পদ্মা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ভারতীয় অংশে ফারাক্কা বাঁধ সে মূল স্রোতধারা বন্ধ করার ফলে আজ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল জুড়ে শুরু হয়েছে মরুভূমির আলামত। গ্রীষ্মে দারুণ গরম আর শীতকালে নিদারুণ শীত। হিমালয় এলাকার ঘন বনরাজি নিশ্চিহ্ন হওয়ার ফলে আমাদের দেশে মাঝে মধ্যে শৈত্য প্রবাহ বয়ে যায় বলে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। সিলেটের বুকে ভূ-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী টিলা-পাহাড়গুলো যারা একের পর এক যখন নিধন করে চলেছে তারা হয়ত জানতে বা বুঝতেও পারছেন না যে প্রকৃতির কি নিদারুন ক্ষয় ক্ষতি তারা সাধন করে চলেছেন। কিন্তু আজ না হোক কাল কিংবা অদূর অথবা সুদূর ভবিষ্যতে প্রকৃতি যখন এর প্রতিশোধ নিতে শুরু করবে, তখন ঐ প্রতিশোধ যারা পাহাড় কেটে চলেছেন শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং প্রকৃতির প্রতিশোধের কুফল পোহাতে হবে সারা দেশবাসীকে। অন্য কথায় জনা কয়েকের অবিমৃষ্যকারিতার মূল্য দিতে হবে গোটা জাতিকেই। সুতরাং আর কালবিলম্ব না করেই এ মূহূর্ত থেকে যে কোনভাবে যে কোন উপায়ে প্রয়োজনীয় যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সিলেটের টিলা/পাহাড় নিধন বন্ধ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকল মহলকে তৎপর হতেই হবে।
এটা ঠিক গাছ কাটলে গাছ হতে পারে। বীজ ফেললে চারা হয় সে চারা একদিন মহীরুহে পরিণত হতে পারে। কিন্তু যে পাহাড় বা যে টিলাটি কেটে ফেলে সমান করা হলো প্রকৃতির নিয়মে প্রতিষ্ঠিত সে পাহাড়টি কিংবা সে টিলা আর মানুষের পক্ষে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমার এ দীর্ঘ সিলেটে অবস্থানকালে লক্ষ্য করেছি ক্ষমতাবান ও বিত্তশালীরাই পাহাড়/টিলা কেটে ধ্বংস করার ভূমিকায় বেশী অবতীর্ণ। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, সিলেট শহর থেকে ৮/১০ মাইল পর্যন্ত দূরত্বের বেশীরভাগ টিলাই কেটে সাফ করা হয়েছে। এসব টিলার মাটি কেটে শহর বা শহরতলীর বিভিন্ন বসতবাড়ী আবাসিক এলাকা পুকুর ইত্যাদি ভরাট করা হচ্ছে। বিত্তবান আর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ বিভাগের লোকদের সহযোগিতায় সিলেটের হাজার হাজার একর টিলাভূমি নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। সিলেট শহরের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ সব দিকসহ চারপাশের ঢেউখেলা পাহাড় শ্রেণী আজ আর চোখে পড়ে না। যা ছোট ছোট টিলা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এগুলোও নিধন চলছে। পাহাড়-টিলা কাটার কাজে প্রতিদিন শতশত শ্রমিক ও ট্রাক নিয়োজিত রয়েছে। নিধন চলছে সংঘবদ্ধভাবে। পরিতাপের বিষয়, যারা এসব অপরাধমূলক কাজে বাঁধা দেয়ার কথা তারা নীরব ও নির্বিকার। তাদেরটা হয়ে গেলে তারা কথা বলে না। অর্থ পিপাসুদের প্রবনতাটা এমনই যে, আমাদের এ প্রিয় দেশটি জাহান্নামে যাক তাতে তাদের কিছুই আসে যায় না। তাদেরটা হলেই বাকীদের নিয়ে চিন্তা করে না তারা।
যেহেতু পাহাড়-টিলা কাটার বিরুদ্ধে আইন আছে, তাই পুলিশের হয়েছে পোয়াবারা। পুলিশের নাকের ডগায় সবকিছু হচ্ছে। শোনা যায় পাহাড় কাটার সুবিধার্থে নাকি টোকেন প্রথাও চালু রয়েছে। কোন সময় পাহাড় বা টিলা কাটার দৃশ্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়লে ২/১টি ট্রাক আটক করা হলেও তার পিছনে থাকে অন্য উদ্দেশ্য। আবার কেউ কেউ বলেন পাহাড়/টিলা কাটার ব্যাপারে কড়াকড়ি যত আরোপ করা হয় তাতে নাকি ট্রাক প্রতি বখরা দেয়ার অংকটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে টিলা ও পাহাড় কাটার ব্যাপারে নতুন যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে একজন পরিবেশ কর্মী হিসাবে তা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি সবিনয়ে নিবেদন জানাচ্ছি। এটাতে আইনের ফাঁক-ফোকর রয়েছে।
আজকাল শুধু ভাল কথা, নীতিবাক্য আর সদাচরণের মৌখিক আহবান কোন কাজে আসেনা। এর জন্য নীতি ও নিয়মের পাশাপাশি কঠোর আইনের প্রয়োজন। আর সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের দরকার। যারা পাহাড় কাটছে, পাহাড় ন্যাড়া করছে এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে, এসব ব্যর্থতার দায় শুধু তাদের নয়। এর দায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোরই বেশি। নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকান্ড জোরদার করার ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যা এবং কারা এসবের পিছনে সক্রিয় রয়েছে,এ বিষয়গুলো ভালভাবে খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জননিরাপত্তা, পাহাড়ের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা আজ অপরিহার্য। এ কাজটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা আশা করব চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, বগুড়া, কুমিল্লাসহ সারাদেশের পাহাড়-টিলা যে টুকুই অবশিষ্ট আছে তা সংরক্ষণের জন্য কঠোর আইন প্রণীত হোক। একই সাথে সে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কঠোর মনোভাব ও ব্যবস্থা গৃহীত হোক। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে সর্বস্তরের সকল নাগরিককে সোচ্চার হতে হবে। একজন পরিবেশকর্মী এবং প্রবীন সাংবাদিক হিসাবে আমি এ ব্যাপারে সিলেটের প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনয়ের সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের এখনই এ মুহূর্তে থেকে এ ব্যাপারে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। গ্রহণ করতে হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতেহবে নিষ্ঠুর পাহাড় নিধন। আমরা চাই না শুধু সুশ্রী, সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর চট্টগ্রাম বা সিলেটের পরিচয় স্রেফ ইতিহাসে পরিণত হোক। আমরা সুস্থ শরীর ও মন, সুন্দর পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দরতম নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ রেখে যেতে চাই। আর এটা এককভাবে সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রচেষ্টা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিষ্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (স্বর্ণপদক) প্রাপ্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন